বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম আয়োজন করেছে প্রতিষ্ঠানটির ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ কমওয়ার্ড : এক্সিলেন্স ইন ক্রিয়েটিভ কমিউনিকেশনের ১২তম সংস্করণের। কানস লায়নস ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অব ক্রিয়েটিভিটির সহযোগিতায় রাজধানীর একটি হোটেলে জমকালো গালা আয়োজনের মাধ্যমে ১২৭টি বিজ্ঞাপন ও প্রচারণাকে এই বছরের কমওয়ার্ডে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
কমিউনিকেশনস এবং মার্কেটিং খাতে কর্মরত এবং অভিজ্ঞ প্রায় ৭০০ জনেরও অধিক মানুষের সমাগমে ২৫টি বিভাগের অধীনে- ব্রোঞ্জ, সিলভার, গোল্ড এবং গ্র্যান্ড প্রিক্স এই চার র্যাঙ্কে সেরা বিজ্ঞাপনগুলোকে পুরস্কৃত করা হয় এই আয়োজনে।
এই বছর পুরস্কারের জন্য ১৩৭৯টি মনোনয়ন জমা পড়ে। ১ জুন, ২০২২ থেকে ৩১ মে, ২০২৩ পর্যন্ত উন্মোচিত এবং প্রচারিত ক্যাম্পেইনগুলো নমিনেশনের জন্য বিবেচিত হয়। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ মনোনয়ন বাছাই করা হয় এবং ১২৭টি মনোনয়ন চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত হয়। ২৬৮ জন অভিজ্ঞ জুরি প্রাথমিকভাবে ১৪টি শর্টলিস্টিং জুরি প্যানেলে এবং পরবর্তীতে ১১টি গ্র্যান্ড জুরি প্যানেলে বিভক্ত হয়ে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পাদন করেন। বিজয়ী ক্যাম্পেইনগুলোর যথাযথ অবস্থান নিশ্চিত করতে ১১ জন জুরি সভাপতি অধিকতর যাচাই প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন।
১২তম কমওয়ার্ডে ৫টি ক্যাম্পেইন গ্র্যান্ড প্রি, ১৯টি গোল্ডেন, ৩৯টি সিলভার এবং ৬৪টি ব্রোঞ্জ সম্মাননা দেওয়া হয়।
আয়োজনটির শুভেচ্ছা বক্তব্য এ বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত এক বছরে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় অগ্রযাত্রায় আমাদের ক্রিয়েটিভ শিল্পেও আমরা দারুণ কিছু নিরীক্ষামূলক কাজ হতে দেখেছি। আজকের এই আয়োজনটি আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা এবং আসন্ন ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার মাঝে একটি মেলবন্ধন সৃষ্টি করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আজকে যেই বিজ্ঞাপন এবং প্রচারণাগুলো সম্মাননা লাভ করে সেগুলো একইসাথে আমাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং সম্মিলিত প্রয়াসকে তুলে ধরে।’
এই বছর কমওয়ার্ডের সহযোগিতায়, বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান, এফসিবি বিটপি, প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনী শিল্পের অন্যতম অগ্রদূত, রেজা আলীর সম্মানে ‘রেজা আলী ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্পিরিট এওয়ার্ড’-এর প্রচলন করেছে। মূলত, স্বাধীন এবং সৃজনশীল প্রচারণাকে উদযাপন করার লক্ষ্যেই এই সম্মাননাটি প্রদান করা শুরু হয়েছে এই বছর থেকে।
এইবারের গালা আয়োজনে প্রখ্যাত অভিনেতা, নাট্য পরিচালক এবং প্রযোজক রামেন্দু মজুমদারকে বাংলাদেশের সৃজনশীল শিল্পে অবস্মরণীয় অবদান রাখার জন্য আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও, বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান এডকম লিমিটেডের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটিকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
১২তম কমওয়ার্ডের আগে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের উদ্যোগে ‘ক্রিয়েটিভিটি ইন দ্য এজ ও ডিসরাপশন’ প্রতিপাদ্যকে মুখ্য করে ১২তম কমিউনিকেশন সামিট অনুষ্ঠিত হয়। দেশ ও বিদেশের বিশেষজ্ঞ ও ক্রিয়েটিভ কমিউনিকেশন শিল্পে কর্মরত পেশাজীবীদের অংশগ্রহণে এবারের সামিটে আলোচিত হয়েছে বার্তা যোগাযোগ শিল্পে চলমান ট্রেন্ড, কৌশল, চ্যালেঞ্জ ও সমাধানসংক্রান্ত বিষয়াবলি।
৩টি কিনোট সেশন, ৪টি প্যানেল ডিসকাশন, ৩টি ইনসাইট সেশন ও ১টি কেস স্টাডি নিয়ে সাজানো সামিটে বারবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে নিউ মিডিয়া এজ, ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার উপযোগী ব্যবহার, ট্রেন্ড, প্রযুক্তি এবং দর্শক সংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি। কিনোট এবং ইনসাইট সেশনগুলোতে বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন নিজ নিজ জ্ঞান, পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা। অন্যদিকে, প্যানেল আলোচনাগুলোতে বিশেষজ্ঞদের পারস্পরিক আলোচনা ও মতবিনিময়ে উঠে এসেছে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিনব সব প্রচেষ্টা।
কমিউনিকেশন সামিট ২০২৩-এ কিনোট বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্থ সিনহা, প্রেসিডেন্ট, টাইমস অফ ইন্ডিয়া গ্রুপ; প্রেসিডেন্ট, দ্য এডভারটাইজিং ক্লাব, ইন্ডিয়া; প্রেসিডেন্ট, রেসপন্স, বেনেট কোলম্যান অ্যান্ড কোং লিমিটেড; এক্সিকিউটিভ কমিটি মেম্বার, ইন্টারন্যাশনাল এডভারটাইজিং এসোসিয়েশন, আইএএ; কাইনাজ কর্মকার, চিফ ক্রিয়েটিভ অফিসার, ওগিলভি ইন্ডিয়া এবং আলী শাহবাজ, চিফ ক্রিয়েটিভ অফিসার, এম অ্যান্ড সি সাচি গ্রুপ সিঙ্গাপুর; ডিরেক্টর, ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশন। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এই আলোচকেরা বাংলাদেশি পেশাদারদের সাথে তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে স্থানীয় সৃজনশীল শিল্পের জন্য আগামী দিনে আরও আকর্ষক যোগাযোগের বিকাশ এবং প্রদানের জন্য একটি নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। এ ছাড়াও সামিটের সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন বিশিষ্ট ব্র্যান্ড এবং কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ, কণিষ্কা চক্রবর্তী।
সামিটের প্রথম কিনোট সেশনে আলোচক পার্থ সিনহা কমওয়ার্ডের মতো আয়োজনের গুরুত্বকে তুলে ধরেন। এ ছাড়াও তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমতার সার্বজনীন প্রয়োগ, প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের সৃজনশীল প্রচারণার ব্যবধানকে কমিয়ে এনেছে। একইসাথে এই শিল্পে উদ্ভাবনী প্রচেষ্টার অবদানও কোভিড পরবর্তী সময়ে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। করোনাকালীন বাধাগুলোকে আমরা উদ্ভাবনী ক্ষমতার মাধ্যমেই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা যত বেশি উদ্ভাবনকে বরণ করে নিতে পারব, সামগ্রিকভাবে আমরা ততটাই এগিয়ে যেতে সক্ষম হবো।’
কমিউনিকেশন সামিট ও কমওয়ার্ড ২০২৩, বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ দুইটি কানস লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অফ ক্রিয়েটিভিটির সহযোগিতায় এবং দ্য ডেইলি স্টারের সম্পৃক্ততায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার– বাংলাদেশ ক্রিয়েটিভ ফোরাম, রোরিং লায়নস; নলেজ পার্টনার– মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ; হস্পিটালিটি পার্টনার– ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা; টেকনোলজি পার্টনার– আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড; পিআর পার্টনার– ব্যাকপেজ পিআর।
মন্তব্য করুন