দুই দশক ধরে যশোরের মনিরামপুরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-গ্রুপিংয়ে দুভাগে বিভক্ত বিএনপি। উপজেলা বিএনপির কোন্দল মিটিয়ে এক কাতারে আনতে ব্যর্থ জেলা বিএনপি। সম্প্রতি দল পুনর্গঠনের কার্যক্রম গতি সঞ্চালন, দলীয় বিভাজন ও অনৈক্য দূর করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মনিরামপুর উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে গিয়ে লাঞ্চিত হয়েছেন জেলা নেতারা। জেলার সমন্বয় ছাড়া অসমাপ্ত কমিটি গঠন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য পত্র দেওয়া হয় উপজেলা আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের।
জেলার নির্দেশনা উপেক্ষা করে শূন্যপদের বিপরীতে কমিটি গঠন করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শহীদ মো. ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে। আহ্বায়কের একক সিদ্ধান্তে কমিটি গঠনে বিষয়ে জেলাতে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ক।
অবশ্য, সমন্বয় ছাড়া কাউকে দায়িত্ব প্রদানের সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে জেলা বিএনপি। এসব নিয়ে উপজেলা বিএনপির অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালে মনিরামপুর থানার অন্তর্গত ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ওয়ার্ডপর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন সময়ে চালুয়াহাটি ও মশ্বিমনগর ইউনিয়ন বাদে সবকটি ইউনিয়নের অধিকাংশ ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন হয়। ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর রোহিতা ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটি করতে গিয়ে লাঞ্চিত হন জেলার প্রতিনিধিরা। এ ঘটনায় রোহিতা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমানকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
দুদিন পর ১৪ অক্টোবর জেলা বিএনপির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মনিরামপুর উপজেলার অসমাপ্ত ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনের কার্যক্রম জেলা বিএনপি পরিচালনা করবে। একইসঙ্গে আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কগণকে দলের কমিটি পুনর্গঠনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাবেরুল হক সাবুর স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, যশোর জেলার ঝিকরগাছা, চৌগাছা, অভয়নগর ও কেশবপুর উপজেলাতে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে দিন ধার্য করা হয়েছে। চলতি মাসে এই চারটি উপজেলাতে ভোটের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হতে যাচ্ছে।
এদিকে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মনিরামপুর উপজেলার ইউনিয়নপর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। এ সুযোগে ভোটার বাড়াতে একক সিদ্ধান্তে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে চেষ্টা করছেন অনেকেই। অবশ্য, অসমাপ্ত কমিটি দিতে ব্যর্থ হলে থমকে যেত মনিরামপুর থানা বিএনপির কমিটি গঠন।
চলতি মাসের ১১ জুলাই মনিরামপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শহীদ মো. ইকবাল হোসেন উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের পাঁচজনকে আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালনের জন্য চিঠি পাঠিয়েছেন।
খেদাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি থেকে আব্দুল মান্নান পদত্যাগ করায় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও সামছুজ্জামানকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন পদত্যাগ করায় সেখানে মাস্টার মতিয়ার রহমানকে আহ্বায়ক ও মোশারফ হোসেনকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।
এ ছাড়া চালুয়াহাটি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক বজলুর রহমানের মৃত্যু হওয়ায় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলামকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মনিরামপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ মো. ইকবাল হোসেন এককভাবে স্বাক্ষর করে এসব চিঠি পাঠিয়েছেন।
এদিকে এ সিদ্ধান্তকে জেলা বিএনপির নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল বলে দাবি করছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন, আসাদুজ্জামান মিন্টু, সামসুজ্জামান শান্তসহ অনেকেই।
আহ্বায়কের একক সিদ্ধান্ত ও জেলা কমিটির নির্দেশনা উপেক্ষা করায় মনিরামপুর বিএনপির অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সদস্য আলহাজ মোহাম্মাদ মুসা বলেন, বিষয়টি জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে। সমন্বয় ছাড়া কমিটি পুনর্গঠন না করায় দ্বিতীয়বারের মতো আহ্বায়ক ইকবাল হোসেনকে জেলা থেকে চিঠি দিয়েছে। পত্রটি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাবেরুল হক সাবুর স্বাক্ষরিত।
জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে একটি পত্র হাতে পেয়েছি বলে স্বীকার করে শহীদ মো. ইকবাল হোসেন বলেন, মৃত্যু ও পদত্যাগ করায় শূন্য স্থানগুলোতে পদাধিকার বলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা কী করবে সেটা তাদের ব্যাপার।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাবেরুল হক সাবু কালবেলাকে বলেন, মনিরামপুর উপজেলাতে দুটি গ্রুপ আছে। তবে গ্রুপিং ঠিক না, এটা হলো নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা। আমরা সেটা সমাধানের চেষ্টা করছি।
জেলা নির্দেশনা না মেনে ইউনিয়নপর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের ব্যাপারে সদস্য সচিব বলেন, সমন্বয় ছাড়া কমিটি পুনর্গঠনের কাজ স্থগিত করতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ মো. ইকবাল হোসেনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন