বরগুনার বামনা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশের করা একটি মামলায় ছনিয়া আফরোজ নামের ১০ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পর থেকেই ওই অন্তঃসত্ত্বা ও তার স্বামী গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত না মানার কারণেই এ মামলায় তাদের (স্বামী-স্ত্রী) দুজনকে আসামি করা হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী ওই অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবন্ধীর স্বামী সাদ্দাম হোসেনের। অন্যদিকে ওই মামলায় উল্লিখিত ঘটনাস্থল থেকে আটক আসামিদের তথ্যের সূত্র ধরে সাদ্দাম হোসেন ও ছনিয়া আফরোজকে আসামি করা হয়েছে বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন বামনা থানার ওসি তুষার কুমার মণ্ডল।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, স্থানীয় ফরিদা বেগম এবং দুলিয়া বেগম নামে দুই নারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ হোসেন হাওলাদার ফরিদা এবং দুলিয়ার পক্ষ হয়ে একবার সালিশি করলে আমরা সেই সালিশের রায় মানিনি। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ বৈঠকে বসি। সেই সালিশ বৈঠকে আ.লীগ নেতা আলতাফ হোসেন হাওলাদারকে রাখা হয়নি। সালিশের রায় দুলিয়া এবং ফরিদা মেনে নেননি।
সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, দুলিয়া বেগম বরগুনার সাবেক এক পুলিশ সুপারের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন এবং ওই পুলিশ সুপারের মাকে ধর্ম মা ডেকেছেন। পুলিশ সুপারের বাসায় কাজ করার সুবাদে বামনা থানার ওসি তুষার কুমার মণ্ডল ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দেবাশীষ হাওলাদার সরাসরি ফরিদা এবং দুলিয়ার পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন।
সাদ্দাম আরও বলেন, আমি এবং আমার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্ত্রীকে মামলায় ফাঁসাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি মো. আলতাফ হোসেন হাওলাদার। কারণ আমরা তার সালিশের রায় না মেনে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ করলে সেখানে তাকে রাখেনি। আর সে ক্ষোভেই তিনি আমাদের মিথ্যা মামলায় আসামি করতে সহযোগিতা করেছেন। এ মিথ্যা মামলার কারণে আমি এখন আমার স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
এলাকাবাসী জানান, অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেন একজন কৃষক। তার স্ত্রী ছনিয়া একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। ছনিয়া বর্তমানে ১০ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তারা কখনোই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ১নং বুকাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজ বলেন, আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই থানায় গিয়ে ওসির কাছে এর প্রতিবাদ করেছি। আমি তাকে বলেছি এই মেয়েটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং ১০ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আগস্টের ৮ তারিখে মেয়েটির বাচ্চা ডেলিভারি হওয়ার কথা রয়েছে। সুতরাং এই মেয়েটিকে যেন কোনোভাবেই মামলায় আসামি করা না হয়। ওসি সাহেব আমার কথা শোনেননি। তিনি মেয়েটি এবং তার স্বামীকে মামলায় আসামি করেছেন। তিনি আমাকে বলেছেন তার কাছে প্রমাণ আছে। প্রমাণ ছাড়া কাউকে আসামি করা হয়নি।
এ বিষয়ে বামনা থানার ওসি তুষার কুমার মণ্ডল কালবেলাকে বলেন, ২৩ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের আমতলী গ্রামে নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশে জামায়াতের কিছু নেতাকর্মী একত্রিত হচ্ছিল। এ সময় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় সাইমুন ও জাফর নামের দুজনকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। বাকি আসামিরা পালিয়ে যায়।