বছরের সব মৌসুমে গোমতী নদীর খরস্রোতা রূপ দেখা না গেলেও এবার বর্ষা মৌসুমে এই নদী যৌবনবতী হয়ে উঠেছে। পাহাড়ি ঢলে হয়ে উঠেছে স্রোতস্বিনী। জলের কলকল ধ্বনি আর জলরাশির বুকে খেলা ঢেউয়ে নদীটি মোহনীয় হয়ে উঠেছে। এতে একসময়ের খরস্রোতা গোমতীর রূপ রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি গোমতী পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ও পাহাড়ি ঢলে গোমতীর সচরাচর রূপে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। জলে জলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে গোমতী। এতে গোমতীর নিজস্ব সৌন্দর্য প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি গ্রামবাংলার চিরচেনা বর্ষার রূপ যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গোমতীর সুদর্শন বেড়িবাঁধ নদীর তীর ঘেঁষা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ছোট ছোট রিসোর্ট। এসব রিসোর্ট ঘিরে শেষ বিকেলে জমে দর্শনার্থীদের ভিড়। গোমতীর টইটুম্বর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড় বাড়ে নদীর পারে।
জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশের যৌথ নদীগুলোর একটি হলো গোমতী নদী। গোমতী একটি পার্বত্য নদী। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের ডুমুর নামক স্থানে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পার্বত্যভূমির মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে কুমিল্লার সদর উপজেলার গোলাবাড়ি, টিক্কারচর, কাপ্তান বাজার হয়ে বয়ে গেছে। এটি কুমিল্লা সদর পেরিয়ে শহরের উত্তর প্রান্ত এবং ময়নামতির পূর্ব প্রান্ত অতিক্রম করে জেলার বুড়িচং উপজেলাকে ডানে রেখে এটি ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানিগঞ্জ পৌঁছেছে।
ময়নামতি থেকে কোম্পানীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার। কোম্পানীগঞ্জ থেকে পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়ে দাউদকান্দি উপজেলার শাপটা নামক স্থানে এসে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে গোমতী। কোম্পানীগঞ্জ হতে মেঘনা নদীতে পতিত হওয়া পর্যন্ত গোমতীর দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার, আর বাংলাদেশ ভূখণ্ডে গোমতীর দৈর্ঘ্য ১৩৫ কিলোমিটার। এই নদীর উপনদী ডাকাতিয়া এবং এর শাখা নদীর নাম বুড়ি নদী।
কুমিল্লার গোমতী নদীর তীরবর্তী ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের মালাপাড়া, আসাদনগর, মনোহরপুর, অলূয়া, রামনগর ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে থইথই করছে গোমতী। অনেক বছর পর গোমতী নদীতে এত পানি জমতে দেখা গেছে। যার ফলে প্রকৃত গোমতীর রূপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মালাপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, আমার বাব-দাদার কাছ থেকে শুনেছি এই নদীকে কেন্দ্র করে ৩ শত বছর আগে মালাপাড়া বাজার গড়ে ওঠে। গোমতী নদীতে পানি না থাকায় এক সময়ের নামডাকওয়ালা বাজারও এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। বহু বছর পর নদীতে পানি দেখে পুরোনো স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এইতো সেদিন বড় বড় নৌকা ভিড়ত বাজারে।
গোমতী পাড়ের শতবর্ষী বৃদ্ধা আব্দুল মজিদ তিতু মেম্বার স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, এক সময় এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান পথ ছিল গোমতী নদী। নদীতে ছোট বড় অনেক নৌকা চলতো। বহুদূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এ বাজারে আসতো পণ্য কেনাবেচার জন্য। এখানে ছিল এক সময়ের অর্থকরী ফসল পাটের বৃহত্তম বাজার। সেই সঙ্গে চাল, আলু ও মাছের বিশাল বাজার বসতো। এখন সেই ভরা নদী মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। এ বছর গাঙয়ে আবার পানি এসেছে দেখে অনেক ভালো লাগছে।
মন্তব্য করুন