পিরোজপুরে সরকার দলীয় সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিমের বাড়িসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে আগুন, ভাঙচুর ও লুটের ঘটনা ঘটেছে। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে ১০ আগস্ট রাত পর্যন্ত দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটায়।
সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের নাজিরপুর উপজেলার বাসায় দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে মালামাল লুটপাট ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। একইদিন উপজেলার তারাবুনিয়া তার গ্রামের বাড়ি দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দেয়।
একই দিন বিকেলে তার ছোট ভাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম নুরে আলম সিদ্দিকীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
এ ছাড়া পিরোজপুর শহরের পাড়েরহাট রোডস্থ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল, তার মেজ ভাই সহসভাপতি পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, মাতৃসদন সড়কে তার সেজ ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবর রহমান খালেক ও তার স্ত্রী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সালমা রহমান হ্যাপীর বাসা ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুলুর বাসা ও গাড়ি ভাঙচুর করে। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক, ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল আহসান গাজীর পিরোজপুর সদরের মাতৃসদন সড়কের বাসা ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তার ব্যবহৃত গাড়িটি লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা। পরে জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর হোসেন গাড়িটি উদ্ধার করে গাড়ির ড্রাইভারের কাছে হস্তান্তর করেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অনিরুজ্জামান অনিকের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও বাইপাস সড়কের অফিসে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ৬ আগস্ট সকালে সদর উপজেলার সিও অফিস চত্বরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, জেলা জাসদ কর্যালয়, জেলা পরিষদ, মহিলা পরিষদ ভাঙচুর, গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাব, স্বাধীনতা মঞ্চ ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
পিরোজপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দীন মহারাজের বাড়ি ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। তার ভাই জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলামের বাসা দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মৃদুল আহম্মেদ সুমনকে দুর্বৃত্তরা তার বাসায় ঢুকে হত্যার উদ্দেশে কুপিয়ে জখম করে। পরে বাসা লুট করে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে নাজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ভুক্তভোগী এস এম নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দিন বিকেলে নাজিরপুর উপজেলা সদরে আমার অফিস এবং বাসভবনে সন্ত্রাসীরা একযোগে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালায়। তারা সমস্ত মালামাল লুটে নেওয়ার পরে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতেও তারা বাধা দেয়।
তিনি বলেন, একইদিন সন্ধ্যায় আমার আপন বড় ভাই পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি শ ম রেজাউল করিমের নাজিরপুরের বাসভবনে ওই সন্ত্রাসীরা হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর লুটপাট চালিয়ে ভবনটিকে সম্পূর্ণ তছনছ করে। এরপরে সেখানেও তারা পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের সদস্য না হলেও সাধারণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান। আমার প্রশ্ন হচ্ছে সরকার পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু আমি নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আমার বাসভবনে কেন হামলা হলো এবং আমাকে কেন এখন দায়িত্ব ছেড়ে জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হবে।
মন্তব্য করুন