কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ গ্রামে অবস্থিত ১২ একর জায়গা নিয়ে বিস্তীর্ণ জলাশয় যেন রকমারি পদ্মফুলের বিছানা। গোলাপি, সাদা ও নীলের সঙ্গে ফুটেছে বিরল প্রজাতির হলুদ রঙের পদ্মফুল। জলজ ফুলের রানি খ্যাত পদ্মফুল দূর থেকে মনে হয়, বিস্তৃত এলাকা জুড়ে যেন রঙের পসরা সাজিয়েছে।
সেখানে প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্য যেন নিজ হাতে বিলিয়েছে। প্রকৃতি মাঝে মধ্যে তার ভালোবাসা এভাবেই বিলিয়ে দেয়। এখন ওই জলাশয়ের আশপাশে যেন সেই ভালোবাসারই চাষবাস। নীল আকাশের নিচে দিগন্তজোড়া পদ্মফুলের মেলা দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে নানা বয়সের অনেক প্রকৃতিপ্রেমী পদ্মবিলে ঘুরতে আসছেন। প্রাণের আনন্দে উপভোগ করছেন পদ্মফুলের সৌন্দর্য।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিলের পাশে সারি সারি নৌকা বাঁধা। দর্শনার্থীরা নৌকা ভাড়া করছেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে পদ্মবিলে ঘুরছেন। পদ্মফুলের পাশাপাশি রয়েছে সাদা ও নীল শাপলা। বিলের মাঝে পদ্মফুলের ওপরে উড়ছে নানাপ্রজাতির পাখি। ডাহুক, সারস, বালিহাঁস বিলে এসেছে খাবারের খোঁজে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে দর্শনার্থীদের আনন্দ উল্লাস যেন আরো পূর্ণতা পেয়েছে।
তবে গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছরই সবচেয়ে কম পদ্ম ফুটেছে এ বিলে। এবার হলুদ পদ্মের সংখ্যা একেবারেই কম। বিলে এবার গোলাপি ও সাদা রঙের পদ্ম তার রূপের পসরা সাজিয়েছে। পদ্মের মোহনীয় রূপ দেখতে সেখানে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। বিলটি দেখতে দর্শনার্থীরা যাওয়ায় স্থানীয় কিছু মানুষের আয়ের পথও তৈরি হয়েছে।
দল বেঁধে তরুণ-তরুণীরা এবং কয়েকটি পরিবার নৌকা চড়ে পদ্মফুল দেখছে। পদ্মের সঙ্গে অপরিচিত নানা ফুলও দেখা যায় বিলটিতে। তবে বর্তমানে বিলে পানি কম থাকায় ফুলও অনেক কম ফুটেছে। এই বিলটি গোমতী নদীর প্লাবনভূমি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
৩০টি নৌকায় প্রতিদিন শতাধিক দর্শনার্থী পদ্মফুল ও বিল ঘুরে দেখেন। শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পদ্মবিলে আসা দর্শনার্থীদের কেন্দ্র করে ওই এলাকায় চা-চটপটিসহ বিভিন্ন দোকান বসেছে।
নৌকার মাঝি ইউসুফ বলেন, কেউ একলা এলেও কম টাকায় বিলটি ঘুরে দেখতে পারবে। প্রতিজন ৫০ টাকা করে তারা নৌকায় তোলেন। এক সঙ্গে চারজনের বেশি দর্শনার্থী নৌকায় তোলেন না। দিনে প্রত্যেক মাঝির ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। তবে ছুটির দিনে আয় বেশি হয়। এ বছর পানি কম হওয়ায় বিলে পদ্মের সংখ্যা কম থাকায় দর্শনার্থীদের সংখ্যাও অন্য বছরের তুলনায় কম।
পদ্মবিল দেখতে আসা তরুণ উদ্যোক্তা আবদুল্লাহীল বাকী কালবেলাকে বলেন, প্রতিদিন বিকালে অনেক দর্শনার্থী পদ্মবিল দেখতে আসেন। সুযোগ পেলে আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসি। উপরে শরতের নীল আকাশ আর নিচে বিলের পদ্ম এ যেন এক স্বর্গীয় আবেশ। এ কারণে দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ গ্রামের এ পদ্মবিল।
তিনি আরও বলেন, বিলের পদ্ম আকারে বেশ বড়। একসঙ্গে তিন রঙের পদ্ম বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তবে রক্ষাণাবেক্ষণের অভাবে তা এখন হুমকির মুখে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসিল আরেফিন ভূঁইয়া জানান, পদ্ম ফুলের আদি নিবাস দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। এই ফুল ফোটে রাতে। ভোর ও সকালের পর রৌদ্র প্রখর হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত প্রস্ফুটিত থাকে। এই ফুল মানবদেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়েও বেশ উপকারী।
জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান কালবেলাকে বলেন, বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রাম জলাশয়ের পদ্মবিলে নৌকা চলাচলে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। পদ্মবিল দেখতে আসা দর্শনার্থীদেরও পরিবেশের দিকটা নজর রাখতে হবে। বিলটি সংরক্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
মন্তব্য করুন