খুলনায় ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া রীতা রানী রায় নামে এক এতিমের শেষ সম্বল বাড়ি দখল করতে একের পর এক প্রতারণার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও কেসিসির ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ আলী আকবর টিপু। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক ব্যক্তিকে একাধিক ভুয়া আইডি কার্ড প্রস্তুত এবং ভুয়া ওয়ারিশ সার্টিফিকেট ইস্যু করে দখল করেন অর্ধকোটি টাকার একটি বাড়ি। বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন বিভিন্ন স্থানে ঘুরলেও কোনো সুরাহা হয়নি বরং মামলা করে অব্যাহত হুমকির শিকার হয়ে রীতা পালিয়ে বেড়িয়েছেন দিনের পর দিন।
মামলার বিবরণী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশনের বানরগাতি এলাকায় বিআরএস ১৬৮৪ দাগের ৫ দশমিক ২৫ শতক জমির মালিক হরিপদ রায়ের মৃত্যুর পর তার দুই সন্তান শংকর এবং রিতা রায়। হিন্দু পারিবারিক আইনে উত্তরাধিকার সূত্রে শংকর জমির মালিকানা নিয়ে বসবাস করলেও গত ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি স্ট্রোকে শংকরের মৃত্যুর পর তার বাড়ির দিকে নজর পড়ে কাউন্সিলর আলী আকবর টিপুর। তিনি খুলনার দাকোপ উপজেলার বাসিন্দা ধীরাজ রায় এর স্ত্রী শ্যামলী রায়ের নামে একটি ভূয়া এনআইডি কার্ড ইস্যু করেন। সেখানে শ্যামলী রায়কে শংকরের স্ত্রী দেখিয়ে তাকে একটি ভুয়া ওয়ারিশকাম সনদ ইস্যু করেন।
কালবেলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, শ্যামলী রায় খুলনার দাকোপ উপজেলার ধীরাজ রায়ের স্ত্রী। চালনা পৌরাসভা মেয়রের একটি পারিবারিক সনদে দেখা যায় শ্যামলী চালনা (দাকোপ) এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু কাউন্সিলর টিপু তার এলাকার হাজি ইসমাইল রোডের একটি ঠিকানা দেখিয়ে নতুন একটি আইডি কার্ড (স্মার্ট কার্ড) ইস্যু করে, যার ইস্যুডেট শংকরের মৃত্যুরও ৬ মাস পরে। এই আইডি কার্ড দিয়ে তার নামে ২০২২ সালের ১ এপ্রিল একটি ভূয়া ওয়ারিশ সনদ ইস্যু করেন কাউন্সিলর টিপু। যেখানে তার প্রকৃত ওয়ারেশ একমাত্র বোন রীতা রায় এবং তার দুই সন্তানের নাম বাদ দেয়া হয়।
শুধুমাত্র শ্যামলী রায়কে ওয়ারেশ দেখিয়ে দেওয়া ওই সার্টিফিকেট দিয়ে জমি শ্যামলী রায়ের নামে রেকর্ড করে অন্য একজনের কাছে বিক্রি করে ২৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। এ ব্যাপারে রীতা রানী পরিচিত কয়েকজনের মাধ্যমে আদালতের মাধ্যমে মামলা করলে তাকে অব্যাহত হুমকি দিতে থাকেন কাউন্সিলর ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শেখ আলী আকবর টিপু।
এ বিষয়ে রিতা রাণী কালবেলাকে বলেন, বাড়িটি আমার বাবার। আমার ভাই শংকর যেহেতু অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, সে হিসেবে এর বৈধ ওয়ারেশ আমার সন্তানরা। কিন্তু আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর কাউন্সিলর আলী আকবর টিপু কোথা থেকে এক নারীকে ধরে এনে তার স্ত্রী বানিয়ে আমার বাবার বাড়ি প্রতারণার মাধ্যমে দলিল করে আবার অন্য এক জনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে আদালতের অবজারবেশনে ওই ভুয়া আইডি কার্ড বাতিল করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আমি আমার এই কথা বলতে টিপুর কাছে গেলে তিনি আমাদের এই বিষয় বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি দেন। তার ভয়ে দীর্ঘদিন আমি আমার পরিবার নিয়ে পালিয়ে ছিলাম।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর টিপুর অফিসে গেলে তাকে অফিসে পাওয়া যায় না। তার ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মন্তব্য করুন