সাভার থেকে প্রায় দুই যুগ ধরে প্রকাশিত দৈনিক ফুলকির সম্পাদকসহ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। মামলার বাদী জনৈক মো. শাহীনুর ইসলাম।
জানা যায়, গত ২৭ তারিখে ফুলকিতে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে একটি সংবাদ ‘অবশেষে পদত্যাগ করছেন এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী’ এই শিরোনামের নিউজে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ছবির বদলে ভুলবশত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার পরেরদিন ২৮ জুলাই ফুলকিতে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে সম্পাদক পত্রিকায় একটি সংশোধনী প্রকাশ করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাভার মডেল থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করে। পরে থানায় মামলা নথিভুক্ত হয়।
অনাকাঙ্ক্ষিত এই ভুলকে পুঁজি করে উল্টো পত্রিকাটির সম্পাদক ও সাভার প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চালাতে শুরু করে। তাদের অপপ্রচারের ধরন দেখে মনে হচ্ছিল, তারা বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দুইদিন পর শনিবার ভোর রাতে সাভার মডেল থানায় পত্রিকার সম্পাদক নাজমুস সাকিব ও আমাদের নতুন সময় পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি ও সাভার প্রেসক্লাবের সাবেক দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক মো. ইমদাদুল হককে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন সাংবাদিক পরিচয়দানকারী শাহীনুর ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকে ইমদাদুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে ফুলকির কোন সম্পর্ক নেই। আমি আমাদের নতুন সময় পত্রিকার সাভার সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করছি বহুদিন থেকে। কে বা কারা কোন হীন উদ্দেশে আমার নামে মামলায় দিয়েছে তা আমার জানা নেই।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাভার মডেল থানার ওসি দীপকচন্দ্র সাহা বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়মিত মামলা নিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘গণমাধ্যমের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উসকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে’- এমন অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেন সাভারের বিরুলিয়ার শ্যামপুরের বাসিন্দা শাহীনুর ইসলাম ওরফে ধ্রুব নয়ন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
সাভার প্রেসক্লাবের সভাপতি ও ফুলকির সম্পাদক নাজমুস সাকিব বলেন, আমি পবিত্র হজ পালন করে ৪১ দিন পরে ২৫ জুলাই দেশে আসি। তারপরের দিন ২৬ জুলাই রাতে পত্রিকার মেকআপে পেছনের পাতায় কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের নিউজটি বসানো হয়। সেই নিউজে ভুলবশত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি যুক্ত করা হয়। যা পরেরদিন ২৭ জুলাই ছাপা হয়। ফুলকিতে এ ভুল সংশোধন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে পরেরদিন ২৮ জুলাই সংশোধনী প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও সাভার মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে এ মামলায় আমার সঙ্গে অন্য একটি পত্রিকার সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে। এভাবে সংবাদপত্রের কণ্ঠ চেপে ধরা হলে দেশে সংবাদপত্র প্রকাশ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, এর আগেও ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করার অভিযোগ এনে একটি কুচক্রি মহল আমার বিরুদ্ধে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলা দায়ের করে। মামলার বাদী ছিলেন যুবলীগ নেতা ফরিদ আল রাজী নামের এক ব্যক্তি । পরে আদালত বিষয়টি পর্যালোচনা এবং তদন্ত করে কোন প্রমাণ না পেয়ে মামলাটি নিস্পত্তি করে দেন।
সাকিব বলেন, আমি সাভার প্রেসক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি। এর আগেও পরপর চারবার সাভার প্রেসক্লাবের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল আমার সঙ্গে বারবার নির্বাচনে হেরে গিয়ে আমাকে হেয় করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এবারও তাদের সে ষড়যন্ত্র সফল হবে না ইনশাআল্লাহ।
মন্তব্য করুন