সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৫ পিএম
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১১:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পাটের দাম নিয়ে শঙ্কায় কৃষক, কদর বেড়েছে পাটকাঠির

সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা পাটকাঠি। ছবি : কালবেলা
সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা পাটকাঠি। ছবি : কালবেলা

ফরিদপুরের সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলায় চলতি মৌসুমে সোনালি আঁশ পাটের ভালো ফলন হয়েছে। মৌসুমের প্রথম দিকে পাটের দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও বর্তমানে কমেছে পাটের বাজার দর। তাই উৎপাদন খরচ উঠাতে কৃষকদের চোখ এখন পাটকাঠির দিকে। বাণিজ্যিকভাবে পাটকাঠির ব্যবহার বৃদ্ধিতে এর প্রতি যত্নবান হয়েছেন কৃষকরা। পাটকাঠি বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়াতে অনেক চাষি পাট চাষের খরচ উঠাতে পারছেন বলে জানিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এ বছর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৫২৪ হেক্টর জমিতে। জেলায় এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯০৫ টন।

উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ভালো মানের পাট প্রতি মণ ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা এবং নিম্নমানের পাট ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই পাটের আঁশের লোকসান পুষিয়ে নিতে পাটকাঠিতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন চাষিরা।

পাটচাষিরা বলছেন, অনাবৃষ্টি, শ্রমিক সংকট ও মজুরি বৃদ্ধি, পাট পচানোর জন্য পুকুর ভাড়াসহ নানা কারণে পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অথচ বাজারে পাটের দাম একেবারই কম। অধিকাংশ পাটচাষি গর্ত খুঁড়ে শ্যালো ইঞ্জিন মাধ্যমে পানি দিয়ে দিচ্ছেন পাট জাগ। যার ফলে পাটের আশের রং নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে বাজারমূল্য। তবে পরিবর্তন হচ্ছে না শুধু পাটখড়ির; তাই পাটের আঁশের লোকসান পুষিয়ে নিতে পাটকাঠিতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন চাষিরা।

চরভদ্রাসন উপজেলা গাজিরটেক গ্রামের আলাউদ্দিন শেখ বলেন, উপজেলার নাকোল ইউনিয়নে একটি পাটকাঠির মিল রয়েছে। সেই মিল থেকে ক্রেতারা এসে পাটকাঠি কিনে নেন। আমরা নিজেরাও মিলে পাটকাঠি নছিমনযোগে পৌঁছে দেই। এতে পাটকাঠি বিক্রি করে পাটের লোকসানও অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে আশা করছি। পাটকাঠির বাণিজ্যিক ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় একই ফসলে আমাদের বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।

সদরপুর উপজেলার পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের পাট চাষি ইউনুস ব্যাপারী বলেন, আমি এ বছর নয় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। এবার চাষ করতে অনেক খরচ হয়েছে, বাজারে দাম সেই তুলনায় কম, মনে হয় না লাভ হবে। কিন্তু জমির পাট থেকে যে পাট খড়ি পেয়েছি তা ভালোভাবে শুকিয়ে পরিষ্কার করে বিক্রি করতে পারলে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হবে।

সদরপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানায়, এ বছর উপজেলার ৯ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৭ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে তোষা, মেছতা ও কেনাফ জাতের পাটের চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। তবে মেছতা জাতের পাট বেশি চাষ হয়েছে। এবার চাষে খরচ বেশি হওয়ার কারণে পাট বিক্রি করে বেশি লাভবান হননি তারা। কিন্তু কৃষকরা পাট ছাড়াও পাটখড়ি বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে বাড়তি আয় করছেন।

চরভদ্রাসন উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানায়, এ বছর উপজেলার ৪ ইউনিয়নে মোট ৯২০ হেক্টর জমিতে এইচএস-২৪ জাতের পাটের চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। ভালো ফলন হলেও চাষে খরচ বেশি হওয়াতে এবার বেশি লাভবান হননি কৃষকরা। কিন্তু পাটকাঠি বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। একশ মোঠা পাটকাঠি ৫০০-৬০০ টাকাতে বিক্রি করছেন কৃষকরা। এর ফলে পাটের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী গ্রামে গ্রামে কৃষকের বাড়ি থেকে পাটখড়ি কিনে তাদের গোডাউনে বিক্রি করার জন্য মজুদ করে রেখে দিচ্ছেন। পরবর্তীতে যখন পাটের সিজন থাকবে না উপজেলায় যখন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে তারা তখন বেশি দামে এই পাটকাঠি বিক্রি করবে বলে জানা গেছে।

এমনই একজন পাটকাঠি ব্যবসায়ী মিলন মোল্যা বলেন, এখন পাটকাঠি বিক্রির মৌসুম। তাই আমরা পাটচাষিদের কাছ থেকে ৮-১০ টাকা মোঠোপ্রতি কিনে শহরে গিয়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি করছি। এতে করে ভ্যানপ্রতি আমাদের ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা আয় হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা মূলত বৃষ্টির ওপর নির্ভর করেই প্রাকৃতিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাটের আবাদ করে থাকেন। কিন্তু এ বছর প্রায় এক মাসের মতো টানা খরা হয়েছে। এ কারণে ফরিদপুরের কৃষকদের প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ জমিতেই সেচ দিতে হয়েছে। যারা সেচ দিয়ে চাষ করেছেন তাদের ফলন ভালো হয়েছে। তবে খরচ বেড়েছে।

তিনি বলেন, পাটের আঁশের সঙ্গে পাটকাঠিও কৃষকদের আর্থিক সমর্থন দিতে পারে। আগে শুধু পাটকাঠি রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হতো; কিন্তু এখন পাটকাঠি দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও এগুলো দিয়ে পার্টিক্যাল বোর্ড ও পাটকাঠি পুড়িয়ে এর ছাই দিয়ে কম্পিউটারের প্রিন্টিং মেশিনের কালি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে জেলায় এবার পাটের দাম কিছুটা কম থাকলেও পাটখড়ির দাম এবার ভালো। যে কারণে কৃষকরা পাটখড়ি বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে ‘কড়া হুঁশিয়ারি’ ভারতের

মে মাসে পুড়তে পারে দেশ

ভাঙা হলো ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের ‘বীক্ষণ’ মঞ্চ

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময় 

সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট আর জয়, মিরাজের ধন্যবাদ পেলেন যারা

সূর্যের তাপে পুড়ছে পাকিস্তান

রাজনৈতিক মতৈক্যে করিডরের সিদ্ধান্ত নিন, সরকারকে সমমনা জোট

ঈদের আগেই বাজারে আসছে নতুন নোট, যা থাকছে নকশায়

মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে ঢাবি অ্যালামনাই

পদোন্নতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে চিকিৎসকদের অবস্থান কর্মসূচি

১০

সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া সেই অধ্যক্ষকে কেন্দ্র সচিবের পদ থেকে অব্যাহতি

১১

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া করিডর নয় : শেখ বাবলু

১২

ইবিতে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদলের নিন্দা

১৩

ইসরায়েলি গুপ্তচর সন্দেহে ইরানে এক জনের ফাঁসি কার্যকর

১৪

তীব্র তাপদাহের সঙ্গে মে মাসে কালবৈশাখী-ঘূর্ণিঝড়ের আভাস

১৫

ফ্যাসিস্ট আমলে হাজার হাজার শ্রমিককে পথে বসানো হয়েছে : রিজভী

১৬

সীমান্তের বাসিন্দাদের যুদ্ধকালীন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ভারত

১৭

খুলনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের থানা ঘেরাও

১৮

ইয়েমেনের হামলায় যুদ্ধবিমান হারিয়ে পিছু হটল মার্কিন রণতরী

১৯

বাড়িতে ছাদবাগান থাকলে মিলবে ৫ শতাংশ ট্যাক্স রেয়াত

২০
X