চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় চাষ হয় বিখ্যাত কাঞ্চন পেয়ারা। তুলনামূলক বিচি কম, মিষ্টি বেশি। কাঞ্চন জাতের এ পেয়ারা স্বাদে-গুণে অনন্য। পাকলে ভেতরের অংশ সাদা, হলুদ কিংবা লালচে হয়ে ওঠে। এ পেয়ারা দেখলেই বোঝা যায় চন্দনাইশের পেয়ারা।
এর মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে কাঞ্চন পেয়ারা। আগস্ট মাসের শুরু থেকেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে কাঞ্চন পেয়ারা বিক্রি করা হচ্ছে। বাগান থেকে ফল সংগ্রহ ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পেয়ারা চাষিরা।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে দোহাজারী, হাশিমপুর, বাগিচাহাট, খাঁনহাট রেলস্টেশন, বাদামতল, রৌশন হাট ও কমলমুন্সি হাট এলাকায় বসে পাইকারি কাঞ্চন পেয়ারার বাজার। এ অঞ্চলে পেয়ারার সবচেয়ে বড় বাজার বসে রৌশন হাটে।
পেয়ারা চাষ বদলে দিয়েছে হাজার হাজার চাষির জীবন এবং বেকারত্ব কমিয়েছে। কাঞ্চননগরসহ আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে এবং পটিয়ার শ্রীমাই, খরনা ও হাইদগাঁও এলাকায় প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়েছে। যা প্রতি মৌসুমে প্রায় ৬ কোটি টাকার বেশি বিক্রয় হয়।
জানা গেছে, কাঞ্চন পেয়ারার চাষ প্রথমে শুরু হয় চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর গ্রামে। এ পেয়ারা গ্রামকে দিয়েছে বিশেষ পরিচিতি; কাঞ্চননগর হয়ে উঠেছে ‘পেয়ারার গ্রাম’। ফলটি সুখ্যাতি পেয়েছে ‘কাঞ্চন পেয়ারা’ নামে।
স্থানীয় পেয়ারা বাগান মালিক আবদুল মালেক বলেন, এ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে নতুন পলি জমার কারণে এখানকার মাটি খুব উর্বর হয়। এর ফলে পেয়ারা চারা রোপণ থেকে শুরু করে গাছ বড় হওয়ার পর পেয়ারা ফলন আসা ও পরিপক্ব পেয়ারা সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছের গোড়ায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ ও গাছে কোনো ধরনের কীটনাশক ছিটানো প্রয়োজন হয় না। এ কারণে এ পেয়ারাকে স্বাস্থ্যসম্মত (অর্গানিক) পেয়ারা বলে অনেকে।
আরেক বাগানের মালিক ইসলাম মিয়া বলেন, কাঞ্চনাবাদ মৌজার পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এ জাতের পেয়ারার চাষ শুরু হয় বলে এ পেয়ারাকে কাঞ্চন পেয়ারা বলা হয়। পরবর্তী সময় বিভিন্ন এলাকায় বীজের মাধ্যমে বাগান ছড়িয়ে পড়ে। পেয়ারা পরিপক্ব হলে নিজেরা বা শ্রমিক দিয়ে শেষ রাতে বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে ভোরে বেলা বাজারে নিয়ে যান। বাজার থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা পেয়ারা কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যায়।
কাঞ্চনাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, পাহাড় কেটে মৎস্য খামার, অধিক লাভের আশায় হাইব্রিড প্রজাতির বিভিন্ন ফলের বাগান করার কারণে পেয়ারা বাগান যেমন কমে আসছে, আবার ইটভাটার ক্ষতিকর প্রভাবে পেয়ারার ফলনও কমে আসছে।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আজাদ হোসেন বলেন, উপজেলার হাশিমপুর, জঙ্গল হাশিমপুর, ছৈয়দাবাদ, লট এলাহাবাদ, দোহাজারী ও ধোপাছড়ি এলাকার পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে ৭২০ হেক্টর জায়গায় পেয়ারা বাগান আছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ১১ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে পূর্বের তুলনায় কাঞ্চন পেয়ারারা উৎপাদন কমেছে।
মন্তব্য করুন