পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার দক্ষিণ ভিটাবাড়ীয়া গ্রামের বেকার যুবক মহাসিন। পড়ালেখা শেষে চাকরি বাকরি না করে ভেবেছেন কৃষি উদ্যোক্তা হবেন। সেই চিন্তা থেকে শুরু করেন মাল্টা চাষ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাল্টা চাষে পাল্টে গেছে তার জীবনচিত্র, সে এখন স্বাবলম্বী। মাল্টাসহ বিভিন্ন কৃষি কাজ করে তিনি বর্তমানে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন।
মাল্টাচাষি মহসিন হাওলাদার জানান, বিএ পাস করে যখন চাকুরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে হতাশ হয়ে পড়েন । করোনা চলাকালে পৃথিবী যখন স্তব্ধ, মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছিল না, তখন ঘরে বসে চিন্তা করেন কৃষি কাজ করবেন। ছুটে যান উপজেলা কৃষি অফিসে। তারা তাকে পরামর্শ দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারী মালটা-১ চাষ খুবই লাভজনক।
তাদের পরামর্শ এবং সহযোগিতায় ২০২১ সালে বাড়ির কাছে রাস্তার পাশে প্রায় দেড় একর ফসলি জমি ভরাট করে দুই শতাধিক মালটা চারা রোপণ করেন। পাশাপাশি শতাধিক লেবু, পেয়ারা গাছ এবং আমড়া, আম গাছ রোপণ করেন। মাল্টা বাগানের এক পাশে তৈরি করেন নার্সারি। এক বছরের মধ্যেই মাল্টা, আম, লেবুসহ বিভিন্ন ফলদ চারা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন শুরু করেন তিনি।
তার বাগানে প্রথম ২ বছর মাল্টার ফলন কিছুটা কম হলেও চলতি বছর প্রচুর পরিমাণে মাল্টা ধরেছে। প্রতিটি গাছে ১শ থেকে ২শ মাল্টা ধরেছে বলে তিনি জানান। এছাড়া কাগজী লেবুও ধরেছে প্রচুর। তিনি এ বছর সব খরচ বাদে তার সবুজ বেষ্টনি থেকে কয়েক লাখ টাকা আয় করেছেন।
মহসিন বলেন, কৃষি অফিসের সহায়তায় তার ১ একর জমিতে ড্রিপ ইরিগেশন করে দেওয়া হয়েছে। তার পরামর্শে এলাকার বহু শিক্ষিত বেকার যুবক এবং যুব মহিলারা কৃষিকাজে এগিয়ে এসেছেন। ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় মাল্টার চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। বেকারত্ব ঘোচাতে এ চাষে এগিয়ে এসেছে এলাকার বহু বেকার যুবক। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে বারী মালটা-১ জাতের সবুজ রঙের মাল্টা চাষ করে তারা স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছেন অনেকেই।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তাকে দেখে উপজেলার দক্ষিণ ভিটাবাড়ীয়া গ্রামের মহসিন হাওলাদার, ইকড়ি গ্রামের জাকির, মাটিভাংগা গ্রামের আল-আমিন আকন, শিক্ষক আবুবকর ছিদ্দিক, দারুল হুদা গ্রামের বাবুলসহ উপজেলার শতাধিক কৃষক এবং শিক্ষত বেকার যুবক উপজেলার প্রায় ১৮ হেক্টর জমিতে মালটা চাষ করেছেন। এলাকার বেশ কিছু বেকার যুবক নিজস্ব জমিতে মালটা চাষ করেছেন এবং পাশাপাশি নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন।
উপজেলার ইকড়ি গ্রামের কৃষক জাকিরের বাগানে ৫ শতাধিক মাল্টা গাছ রয়েছে। তিনি পিরোজপুর জেলার মাল্টার চাহিদা মেটানোর পর ঢাকায় মাল্টা পাঠান। প্রতি বছরের মতো এ বছরও তিনি কয়েক লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করবেন বলে আশা করেন। মাটিভাংগার আল-আমিন আকনের মাল্টা বাগানে প্রচুর পরিমাণে মাল্টা ধরেছে। এলাকার বেকার যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তার বাগান পরিদর্শনে যান বলে তিনি জানান। তার মাল্টা বাগান দেখে এলকার বহু বেকার যুবক মাল্টা চাষে উদ্ধুদ্ধ হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর ভাণ্ডারিয়ায় মালটা চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে; মালটার উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পর্যন্ত উপজেলার মোট ১৮ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজারেরও বেশি মালটা গাছ লাগানো হয়েছে। লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ভিটাবাড়ীয়ায় মহাসিন হাওলাদারের মাল্টা ও লেবু বাগানে ড্রিপ ইরিগেশন করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া চাষিদের বিনামূল্যে মাল্টার চারা, সার, স্প্রে মেশিন, বাডিং নাইফ বিতরণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর মালটা দ্বিগুণ হয়েছে। কমলার তুলনায় মাল্টার অভিযোজন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় সহজেই চাষ করা যাচ্ছে।
সারাদিন রোদ পড়ে ও বৃষ্টির পানি জমে না এমন উঁচু বা মঝারি উঁচু জমিতে মাল্টা চাষের জন্য নির্বাচন করে, প্রতিটি বসতবাড়িতে অন্য ফলের পাশাপাশি ৫ থেকে ১০টি মালটার গাছ লাগানো যেতে পারে।
মন্তব্য করুন