রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২
এম আর মাহবুব, কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

টানা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ঢল। ছবি : কালবেলা
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ঢল। ছবি : কালবেলা

দীর্ঘদিন পর দেশীয় পর্যটনের রাজধানী কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। সাপ্তাহিক দুইদিনের সঙ্গে দুর্গাপূজার টানা চারদিনের ছুটি কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাঝে খুশির বার্তা বয়ে এনেছে। এরই মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে পর্যটন মৌসুম। এরইমধ্যে আবাসিক হোটেলের শতভাগের কাছাকাছি রুম বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। হোটেল-মোটেল জোন, সমুদ্র সৈকত ও কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিগত ৪ মাসে এত সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে আসেনি। টানা ছুটির সঙ্গে শীতের আগাম বার্তা, রাজনৈতিক পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হওয়ায় দেশী-বিদেশি পর্যটকরা ভ্রমণের জন্য সমুদ্র শহরকে বেছে নিয়েছে। বুধববার (৯ অক্টোবর) বিকেলে ও বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে কক্সবাজার সমুদ্র-সৈকতের কলাতলি পয়েন্ট, সুগন্ধ্যা পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, হাজারো পর্যটকে সমুদ্র তীরে পা ফেলানো জায়গা নেই। কেউ সপরিবারে অথবা দলবেঁধে ঘুরছেন। কেউবা সংকেত উপেক্ষা করে পানিতে গা ভিজাচ্ছেন। একই অবস্থা বিউটি স্পট হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেকসহ শহরের বাইরের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে।

কক্সবাজারে সপরিবারে বেড়াতে আসা ঢাকার বাড্ডার সুলতান জানান, জীবনে প্রথম সমুদ্র শহর কক্সবাজারে এসেছি। পরিবার নিয়ে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। হোটেল আর সমুদ্রের আবহাওয়া অনেক ভালো।

তিনি বলেন, আমরা সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত আর হিমছড়ি ও ইনানী ঘুরে উপভোগ করেছি। চমৎকার আবহাওয়ার মাঝে এবারের ভ্রমণের অনুভূতি অতুলনীয়।

গাজীপুর থেকে আসা পর্যটক শরীফ, হৃদয় ও হোসেন বলেন, জীবনে প্রথমবার ট্রেনে চড়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছি। এখানে আসার আগে যতটুকু প্রত্যাশা ও ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করেছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখে তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। আসলে প্রত্যেক মানুষকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা উচিত। এরকম বড় সমুদ্র সৈকত আর বেড়ানোর জায়গা বাংলাদেশের কোথাও নেই।

এদিকে টানা ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজারের প্রায় হোটেল-কটেজ বুকিং হয়ে গেছে। আবার কোনো কোনো অসাধু হোটেল ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ দাম হাঁকাতে অনেক রুম অনলাইন থেকে বুকিং করে রেখেছে।

হোটেল মালিকরা জানান, গত জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও কারফিউ জারির কারণে ২ মাস ধরে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ধস নামে। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শেষার্ধ থেকে ধীরে ধীরে পর্যটক বাড়তে থাকে। গত সপ্তাহের সরকারি ছুটির দিনের কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে প্রায় ৪০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হলেও এবার বেশিরভাগ হোটেলেই শতভাগ রুম বুকিং হয়েছে।

কলাতলির হোটেল কক্স রোটানার জিএম গিয়াস উদ্দিন বলেন, টানা ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজারের হোটেলগুলোর প্রায় শতভাগ কক্ষ ভাড়া হয়ে গেছে। মৌসুমের শুরুতে পর্যটকে ভরপুর হচ্ছে কক্সবাজার। এটি আমাদের জন্য সুখবর। শীত যতই ঘনিয়ে আসবে, কক্সবাজারে পর্যটকও ততই বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

সাগরপাড়ের তারকামানের হোটেল কক্স-ঢুডের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, যৌথবাহিনী নামার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরছে। এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে কক্সবাজারে। এরইমধ্যে শুক্রবার (১১ অক্টোবর) থেকে রোববার (২০ অক্টোবর) পর্যন্ত হোটেলের প্রায় সব রুম বুকিং হয়ে গেছে।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিলকী বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দীর্ঘ ২ মাস দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে চরম মন্দাভাব গেছে। তবে হাজার পর্যটকের আনাগোনায় আবারও স্বরূপে ফিরেছে কক্সবাজার।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজারে হোটেলগুলোতে গড়ে ৯০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয় ছুটির দিনে। আর এখন সাপ্তাহিক ছুটি ও পূজা উপলক্ষে ৯৫ ভাগ থেকে শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ বছর রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের আসবেন বলে আশা করছি।

সূত্র জানায়, বর্তমানে কক্সবাজার শহরের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের রাত-যাপনের সুবিধা রয়েছে। এসব হোটেলে প্রায় ২৫-৩০ হাজার কর্মী নিয়োজিত রয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানান, কক্সবাজারে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবসময় ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি পূজা উপললেক্ষ পুলিশের একাধিক দল সাদা পোশাকে সৈকতসহ বিভিন্ন স্পটে অবস্থান করে কাজ করছেন। দেশের বৃহৎ সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন করতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত প্রশাসন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, শুক্রবার থেকে সাপ্তাহিক ছুটির সাথে দুর্গাপূজার বন্ধ যুক্ত হয়ে টানা ৪ দিনের ছুটিতে পড়েছে সরকারি অফিস-আদালত। এ সুযোগে অবকাশ যাপনের জন্য দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন হাজারো কর্মব্যস্ত মানুষ। কক্সবাজারের পূজার্থী ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ নজরদারি রাখা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নরসিংদীতে ‘আনোয়ারা সুলতানা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

হান্নান মাসউদকে হুমকি দেওয়া যুবক গ্রেপ্তার

৭ দিন বিদ্যুৎ বিল আদায় বন্ধ থাকবে যে এলাকায়

শিশু আয়েশা ও দীপু হত্যার প্রতিবাদে আলোক প্রজ্বলন

‘আমি গিয়ে দেখি ওরা আমার ছেলেকে কোপাচ্ছে’

চিংড়ি চাষিকে কুপিয়ে হত্যা, নারীসহ গ্রেপ্তার ৯

বাংলাদেশকে ভারতের আধিপত্য থেকে মুক্ত করবো : হান্নান মাসউদ

পাখিশিকারিদের সামাজিকভাবে প্রতিহতের আহ্বান

ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার চেয়ে এন্টি ফ্যাসিস্ট স্কোয়াডের আলটিমেটাম

জামায়াত আশ্রয় না দিলে রাস্তায় পড়ে থাকতে হতো : মেজর রঞ্জন

১০

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সুপার ফাইভ কমিটি ঘোষণা

১১

লক্ষ্মীপুরে মাটির নিচে মিলল হালিশহর থানার লুটের পিস্তল

১২

ঘেরের জমি নিয়ে বিরোধে খুন হন সাংবাদিক মিলন, ধারণা পুলিশের

১৩

কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক ৬

১৪

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন হবে ঐতিহাসিক : ইশরাক

১৫

শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আরও সতর্ক হতে হবে : রফিক সিকদার

১৬

ঢাবিতে মুজিব হলের নাম মুছে লেখা হলো ‘শহীদ ওসমান হাদি’ হল

১৭

সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের কাছে পোস্টাল ব্যালট প্রেরণ শুরু

১৮

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া

১৯

ওসমান হাদির জানাজা-দাফন সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হওয়ায় ডিএমপির কৃতজ্ঞতা

২০
X