ইউসুফ আলী সৈকত, মেহেন্দিগঞ্জ (বরিশাল)
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চোখ নয়, মনের আলো দিয়ে চলেন মিজান

দৃষ্টিশক্তিহীন মিজানুর রহমান। ছবি : কালবেলা
দৃষ্টিশক্তিহীন মিজানুর রহমান। ছবি : কালবেলা

জন্মের পর থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন মিজানুর রহমান। তাই পৃথিবী তার কাছে এক অন্ধকার জগৎ। কিন্তু বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তার আচার-আচরণ ও কাজকর্ম দেখে সবাই অবাক হতে থাকেন। আর দশজন স্বাভাবিক ও সুস্থ মানুষ যেভাবে জীবনযাপন করেন, মিজানুরও ব্যতিক্রম নন। অন্যের সাহায্য ছাড়াই চলতে পারেন তিনি।

শুধু স্বাভাবিক কাজকর্মই নয়, মিজানুরের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা। চোখে না দেখলেও গাছে ওঠা, দোকানে ক্যারম খেলা, যে কোনো প্রচারে মাইকিং করা, মোবাইল ফোনে ফেসবুক চালানোসহ নানা কাজ তার কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। তিনি গজল ও গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন। অসাধারণ এসব দক্ষতায় মা-বাবা ও পরিবার শুধু নয়, পুরো এলাকার মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন মিজানুর।

মিজানুর রহমানের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামে। জন্মান্ধ প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমানের চোখের আলো না থাকলেও মনের আলো দিয়ে চলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। ইচ্ছাশক্তির জোরে জয় করেছেন প্রতিবন্ধিতাকে। বর্তমানে তিনি নিজ গ্রাম নয়নপুর পাতনিঘাটা জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম হিসেবে কর্মরত আছেন।

এত কিছুর পরও ২৪ বছর বয়সী মিজানুরেরও রয়েছে আক্ষেপ। হাসিখুশি ও কাজের প্রতি আগ্রহ থাকার কারণে গ্রামের সবাই তাকে কাজে নেন। তার গজল ও গান শুনে বাহবা ও করতালি দিয়ে উৎসাহ দেন। কিন্তু হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মিজানুর সব করতে পারলেও তার অন্ধত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে পারিশ্রমিক কম দেওয়া হয় বলে তার অভিযোগ।

মিজানুরের বাবা ইদ্রিস গাজী কালবেলাকে বলেন, আমি কৃষিকাজ করি। ছেলের জন্মের তিন মাসের মাথায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে নিই। সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শে ১৪ বছর বয়সে ঢাকার চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা দিই। তাতেও কোনো ফল মেলেনি। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। আমার দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেওয়ায় জীবিকার তাগিদে সে বাধ্য হয়ে শিখে নিয়েছে অনেক কাজ।

মিজানুরের মা পারুল বেগম কালবেলাকে বলেন, সে সারা দিনে যে পারিশ্রমিক পায়, তাতে নুন আনতে পান্তা ফোরায়। তবু আত্মসম্মানবোধ থেকে কারও কাছে সে হাত পাতে না। এখন সব পারলেও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় হয়। কীভাবে তার ভবিষ্যৎ চলবে? একে তো অভাবের সংসার, তার ওপর তার বাবার একার উপার্জনে চলে না সংসার।

তিনি আরও বলেন, মাঝেমধ্যে আমার স্বামী অসুস্থ হলে সংসারের চাকা আর চলে না। আমাকে কিছু না দিলেও মরার আগে আমার জন্মান্ধ এই সন্তানের জন্য একটু থাকার মতো কোনো বাড়ি করতে পারলেও মরে শান্তি পেতাম।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কমিক বইয়ে ‘ভয়ংকর পরিণতির ভবিষ্যদ্বাণী’, জাপানজুড়ে আতঙ্ক

দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে বিএনপির বিকল্প নেই: আব্দুস সালাম

ইসরায়েলের পাঁচ সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান

‘আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের ভোটের বাক্স হবে একটাই’

লঙ্কানদের বিপক্ষে ফাইফারের পর যা বললেন তানভীর

হবিগঞ্জে ছাত্রলীগের দুই নেতা আটক

আঘাত, লাল কার্ড, বিদায়—সব পেছনে ফেলে সেমিতে পিএসজি

৬ জুলাই / বিক্ষোভে উত্তাল দেশ, ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা

নারী দলের জন্য গভীর রাতে অভিনব সংবর্ধনার আয়োজন

পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি, খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি: নাহিদ ইসলাম

১০

ক্যান্সার আক্রান্ত জিসানের চিকিৎসার খোঁজ নিলেন তারেক রহমান

১১

সিরিয়ার নতুন জাতীয় প্রতীক ‘সোনালী ঈগল’, অর্থ কী ও কেন?

১২

‘বিআইটি মডেল’ বাস্তবায়ন দাবিতে উত্তাল ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ

১৩

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক উৎসবমুখর নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় বিএনপি : প্রিন্স

১৪

তপশিল ঘোষণার পর জোট বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে : ফারুক

১৫

কুমিল্লায় ৩ খুনের নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার

১৬

চালের দাম নিয়ে সুখবর দিলেন খাদ্য উপদেষ্টা

১৭

আন্তর্জাতিক ইসলামি সংগঠনের প্রতিনিধির সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সভা

১৮

প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন : ধর্ম উপদেষ্টা

১৯

বিচার ও সংস্কারকে নির্বাচনের মুখোমুখি না করার আহ্বান সাকির

২০
X