লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩৮ এএম
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

লামায় বন্যার ভয়াবহ রূপ, শতকোটি টাকার ক্ষতি

বান্দরবানের লামায় বন্যার পানির নিচে ঘরবাড়ি। ছবি : কালবেলা
বান্দরবানের লামায় বন্যার পানির নিচে ঘরবাড়ি। ছবি : কালবেলা

বান্দরবানের লামায় ৭ দিনের টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যা দেখা দিয়েছিল। টানা চার দিন পর্যন্ত পানির নিচে ছিল লামা উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। এতে প্রায় শতকোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানা যায়, লামা উপজেলায় বিগত দিনে সবচেয়ে বড় বন্যা দেখা গিয়েছিল ১৯৮৭ ও ১৯৯৭ সালে। এবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। ১৯৮৭ সালের বন্যার চেয়ে এবার সাড়ে ৩ ফুট পানি বেশি উঠেছে। চার দিনের স্থায়ী বন্যায় সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল ৭ আগস্ট। ওই দিন মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা ১১.৯৬ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে ৬ ফুট উঁচু হয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

ভয়াবহ এই বন্যার পানিতে বহু মানুষের ঘর বাড়ি, গরু, ছাগল ভেসে গেছে। বাড়ির ছাদে আটকে থাকা অনেক পরিবারকে টিন কেটে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় প্রত্যেক ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, এবারের বন্যায় উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী বাজার পাড়া এলাকায় মঙ্গলবার সকালে আবুল হোসেনের স্ত্রী করিমা বেগম (৩৫) ঘরের মাটির দেয়ালচাপা পড়ে মারা গেছেন। একই দিন দুপুরে ৬ নম্বর রূপসীপাড়া ইউনিয়নের এক উপজাতি লোক নদী পার হতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যান। এ ছাড়া ঘর বাড়িতে গাছ ভেঙে পড়ে এবং পাহাড় ধসে ১৫ জনের অধিক লোক আহত হয়েছেন। লামা পৌর শহরের মতো ৭টি ইউনিয়নে একইভাবে আঘাত হেনেছে বন্যা ও পাহাড় ধস। এতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

লামা বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা বলেন, বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে যেখানে মালামাল রেখেছিলাম, সেখানে হানা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যার পানি। কোনোভাবে মালামাল বাঁচানো যায়নি। লামা বাজারের প্রতিটি ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, লামার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বন্যায় প্রাথমিক হিসাবমতে ১ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রায় তিন হাজার ৫০০ মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল প্রায় ২ হাজারে অধিক পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাত থেকে ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় আপাতত ১৫ টন খাদ্যশস্য বিভাজন করে দেওয়া হয়েছে। মোট ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো হিসাব করা যায়নি।

লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌর শহরের এমন কোনো ব্যবসায়ী বা বাসিন্দা নেই যাদের বন্যা বা পাহাড় ধসে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। দুর্গতের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে সহায়তায় সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ভয়াবহ এ বন্যার পানিতে ডুবে ছিল লামা উপজেলা পরিষদ ভবন, লামা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, লামা থানা, সহকারী পুলিশ সুপার কার্যালয়, লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কৃষি অফিস, প্রাণিসম্পদ অফিস,খাদ্য গুদাম,সমাজসেবা অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাচন অফিস, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস,জেলা তথ্য অফিস লামা, বিআরডিবি অফিস, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, গণপূর্ত অফিস। লামা উপজেলা প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, টানা ৬-৭ দিনের বৃষ্টিতে ৪ দিনের স্থায়ী বন্যায় উপজেলার গ্রামীণ সড়ক একেবারে বিধস্ত হয়ে গেছে। রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। লামার বেশকিছু ব্রিজ- কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক ধারণা মতে অবকাঠোমোগত ক্ষতি অর্ধশত কোটি টাকার অধিক।

লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, বন্যার পানিতে লামা উপজেলার কমপক্ষে ২০টির অধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে ডুবে গেছে বেশ ক্ষতি হয়েছে। মোট ক্ষয়ক্ষতির এখনো পরিমাপ করা যায়নি। এ ছাড়া লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা পানিতে ডুবে যায়।

লামা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. সেলিম হেলালী বলেন, বন্যায় লামা খাদ্যগুদামে সরকারি মজুদ করা খাদ্যশস্যের মধ্যে ১৫০ টন (৩ হাজার বস্তা) চাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। বান্দরবান জেলা কর্মকর্তার নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লামা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বন্যার পানিতে ভিজে যাওয়া চাল আলাদা করা হচ্ছে। বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।

লামা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন স্থানে শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গেছে, অসংখ্য স্থানে গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। লামা সাব-স্টেশনে ইয়াংছাসহ কয়েকটি ফিড চালু করা হয়েছে।

লামা উপজেলা কৃষি অফিসার রতন কুমার বর্মন বলেন, অধিকাংশ আবাদি জমি ও ফসলের মাঠ বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। সব ধরনের ফসল ও শাকসবজি নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির অবস্থা উন্নতি না হলে কৃষিখাত চরম বিপর্যস্ত হবে। প্রচুর মজুদ সার নষ্ট হয়ে গেছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, বন্যার শুরুতে ঝুঁকিতে থাকা লোকদের মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। পরে তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৪ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। সাধ্যমতে তাদের শুকনো ও রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যা, ৫ জেলায় মানবিক বিপর্যয়

লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, বন্যার পানিতে পানিবন্দি মানুষকে নৌকায় করে জনপ্রতিনিধিরা খাবার পৌঁছে দিয়েছে। অনেককে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। এতবড় বন্যার আঘাত ঘুচিয়ে উঠতে সময় লাগবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জামায়াতের মনোনয়ন পেলেন তুরস্ক ফেরত ড. হাফিজ

এশিয়া কাপ ট্রফি তালাবদ্ধ করে রেখেছেন নকভি, কারও ছোঁয়াও নিষেধ

অভিনয়-নির্মাণে ব্যস্ত পলাশ

কত বয়সে শুরু করবেন কোলেস্টেরল টেস্ট? চিকিৎসক যা বলছেন

অবৈধ পার্কিংয়ে বাসচালককে জরিমানা, পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা

পাল্টে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপের সময়

১৭ জেলায় রাতে ঝড়ের আভাস

ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আর নেই

দিল্লিতে বসে হাসিনার অপরাজনীতি চলবে না : রাশেদ প্রধান

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন শহিদুল আলম

১০

এরদোয়ানের সবুজ সংকেত, গাজা মিশনের জন্য প্রস্তুত তুর্কি সেনা

১১

শাহবাগের তিন জায়গায় ৩ জনের মরদেহ

১২

মিয়ানমারে আবারও সংঘাত, সীমান্তে গোলাগুলি

১৩

এক রাতে ছয়টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি

১৪

এবার ইসরায়েলে মোতায়েন হবে মার্কিন সেনা

১৫

ট্রাম্পের নোবেল না পাওয়ার কারণ জানাল শান্তি কমিটি

১৬

সেলস বিভাগে নিয়োগ দিচ্ছে রূপায়ন গ্রুপ

১৭

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন ৮ কর্মকর্তাকে রদবদল

১৮

বিএনপির ৩১ দফা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে : কফিল উদ্দিন

১৯

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত নজরুল / ‘যদি ফোন বন্ধ থাকে, ধরে নিও আমি বেঁচে নেই’

২০
X