প্রায় দেড় দশক আগে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন পারভেজ মল্লিক; তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’বারের নির্বাচিত ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। ওই সময় ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা সাভারের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন মাহমুদুল হাসান আলাল। চার বছর আগে আলাল মারা যান। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে সতীর্থকে শেষ দেখাও দেখতে পারেননি পারভেজ মল্লিক। তবে দখলদার সরকার পতনের পর পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে সহযোদ্ধার বাড়ি গেলেন তিনি। প্রয়াতের বাড়ি গিয়ে জানালেন সমবেদনা, কবর জিয়ারত করে করলেন দোয়া। এভাবেই সতীর্থের টানে এসে গড়লেন রাজনৈতিক বন্ধনের নজির।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সাভারের বিরুলিয়ায় আসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মল্লিক। এ সময় পরিবারের সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করাকালীন সাভার বিএনপির সভাপতি আলাল চেয়ারম্যানের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেতেন বলে জানান পারভেজ মল্লিক। কথা বলতে গিয়ে বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
পারভেজ মল্লিক বলেন, শুধু রাজনৈতিক কারণে নয়, সম্পর্কের জায়গা থেকে এসেছি এখানে। যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি আলালও রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। জাবিতে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় আলাল ছিল বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আজীবন দলের জন্য ছিলেন অত্যন্ত নিবেদিত। বিজয় দিবস হলে সবাই জানতো ‘মাহমুদুল হাসান আলাল’ কে?
দীর্ঘ ১৪ বছর প্রবাসে কাটানোর সময় বাবা-মাকে হারিয়েছি। আর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু আলালকেও হারিয়েছি। কোভিডের সময় সবাই যখন অসহায়, সে তখন এখানে ব্যাপক আকারে ত্রাণ দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে। তার যেদিন মৃত্যু হয় হৃদরোগে, তার আগের দিনও কথা হয়েছে। আমরা পরিকল্পনা করতাম কিভাবে এগিয়ে যাব। দেশে ফিরে যাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছি, তাদের মধ্যে আলাল চেয়ারম্যান অন্যতম। আমি বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করেছি। এরপর বন্ধুর কবর জিয়ারত করেছি। তার দুই সন্তান আমার নিজেরই যেনো সব। তারা আমার নিজেরই পরিবার, বলেন পারভেজ মল্লিক।
তিনি বলেন, আমি ওর পরিবারের সঙ্গে ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকব। সবাইকে আহ্বান জানাবো, বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে যারা কাজ করেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র মাহমুদুল হাসান আলাল। তার মতো সব অঞ্চলে নেতাকর্মী পেলে দেশের উন্নয়নের জন্য আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। দেশনায়ক তারেক রহমান তৃণমূলকে ভালোবাসেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি আলালের সব কাজ সম্পর্কে জানতেন। তিনি অচিরেই দেশে ফিরবেন। বিএনপি গণতান্ত্রিক ভাবে ক্ষমতায় এলে, তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হলে, আলালের জন্য ও সাভারবাসীর জন্য আমরা কাজ করবো।
এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মাহমুদুল হাসান আলালের সন্তানসহ তার পরিবারের সদস্যরা ও কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গালিব ইমতিয়াজ নাহিদ, ঢাকা জেলা মহিলা দলের সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন, ঢাকা জেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহমান বাবুল, ঢাকা জেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মোহন, সাভার থানা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক গোলাম হোসেন ডালিম, তেঁতুলঝরা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ, বিরুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি হাসান মণ্ডল, বিরুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলিম, বিরুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর, বিরুলিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক কবির হোসেন ও প্রয়াত বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান আলালের ছোট ভাই সাভার উপজেলা ছাত্র দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাভার উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বিরুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মো. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন