উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নিখোঁজ রোহিঙ্গা শিশুকে মাটিতে পুঁতে মুক্তিপণ চাওয়ার ভিডিও ভাইরাল

উদ্ধার শিশু আরাকান। ছবি : কালবেলা
উদ্ধার শিশু আরাকান। ছবি : কালবেলা

কক্সবাজারের উখিয়ায় নিখোঁজ এক রোহিঙ্গা শিশুকে মাটির গর্তে পুঁতে রাখার ভিডিও পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। ভিডিওতে ওই শিশুটি রোহিঙ্গা ভাষায় তার বাবাকে দ্রুত টাকা পরিশোধ করার আকুতি জানায়।

ভিডিওতে শিশুকে বলতে শোনা যায়, ‘আব্বা তরাতরি চেষ্টা গর। মরে গাতত ঘলায় ফিল্লে। টিয়া দে। (বাবা দ্রুত চেষ্টা করো। আমাকে গর্তে পুঁতে ফেলেছে। টাকা দাও)।’

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। এরপরই ভিডিওটি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ১৫ সেকেন্ডের এই ভিডিও গত ১০ জানুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়ার অজ্ঞাত স্থানে ধারণ করা হয়। ভিডিওর ওই শিশুটির নাম মোহাম্মদ আরাকান (৬)। সে উখিয়ার থাইংখালী-১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-১৫ ব্লকের আবদুর রহমান ও আনোয়ারা বেগমের ছেলে। সে গত ৮ জানুয়ারি আরাকান ক্যাম্পের খেলার মাঠ থেকে নিখোঁজ হয়। এরপর ১০ জানুয়ারি তার মা-বাবা এই ভিডিও বার্তা পান। নিখোঁজ সন্তানের সন্ধানে আগেই তার মা-বাবা থানায় জিডি করেছিলেন। ভিডিও দেখার পর তারা নিশ্চিত হন, তাদের ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে।

তারা জানান, অপহরণকারীরা আরাকানের মুক্তির জন্য ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণকারীদের কথা অনুসারে দেখিয়ে দেওয়া স্থানে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আসেন আরাকানের স্বজনরা। এতেও আরাকানকে না ছাড়ায় ধারদেনা করে আরও ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেন। এরপর গত ১৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুতুপালং এলাকার এমএসএফ হল্যান্ড হাসপাতালের সামনে শিশুটিকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যায় সন্ত্রাসীরা।

শিশুটির বাবা আবদুর রহমান জানান, গত ৮ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে এপিবিএন অফিস সংলগ্ন খেলার মাঠে খেলতে গিয়ে আর ফেরেনি আরাকান। দুই দিন ধরে আরাকানের সন্ধানে তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে ঘুরেছেন। পুলিশের কাছেও গেছেন। এপিবিএনের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। এরপর গত ১০ জানুয়ারি দুটি মুঠোফোন (০১৭৬-৬৫৭ ৫৪৬৬ ও ০১৮৯৮-৮২১ ৪২৯) নম্বর থেকে কল দিয়ে বলা হয়, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ছাড়িয়ে নিতে হলে ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। টাকা না পেলে ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় তারা।

আবদুর রহমান আরও জানান, অপহরণকারীরা দাবি করা টাকা আদায় করতে ছেলেকে মাটিতে পুঁতে রেখে ভিডিও করে। আমার স্ত্রীর কানের দুল বিক্রি করে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা পাঠাই। এরপরও তাকে না ছাড়ায় ক্যাম্পের আত্মীয়স্বজনসহ অন্যান্য লোকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাঠাই। এরপর গত ১৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে এমএসএফ হাসপাতালের সামনে আরাকানকে ফেলে যায় তারা।

উখিয়া থানার ওসি আরিফ হোসেন বলেন, শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল। পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্যমতে, গেল এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৯৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে একই সময়ে উখিয়ায় বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ৮৬ জনকে অপহরণ করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঝড়ের কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কমিউনিটি ব্যাংকের চুক্তি স্বাক্ষর

বিরোধীরা আমার মৃত মাকে গালিগালাজ করেছে : মোদি

মাসোহারা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল শেখ হাসিনা : টুকু

সরকারের দৃঢ়তা স্পষ্ট না হলে নির্বাচনের শঙ্কা কাটবে না : মঞ্জু

স্পনসর ছাড়াই এশিয়া কাপে নামতে পারে ভারত

নীলফামারীতে শ্রমিক হত্যায় জামায়াতের বিবৃতি

টি-টোয়েন্টি থেকে ওয়ানডে ইনিংস : পূর্ণ মেয়াদে বিসিবি চালাতে চান বুলবুল

ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না : ফিরোজ

ব্যাংক এশিয়ার পাওনা পরিশোধ এক্সিম ব্যাংকের

১০

সরকারি চাল বিক্রির অভিযোগে বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার

১১

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লুট হওয়া অস্ত্র জমার নির্দেশ চবি প্রশাসনের

১২

চবিতে সংঘর্ষ : ১ হাজার ৯৫ জনকে আসামি করে মামলা

১৩

নুরকে বিদেশে পাঠানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

১৪

প্রাণঘাতী বন্যাকে ‘আশীর্বাদ’ বললেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

১৫

পতিত আ.লীগ ভারত থেকে গুজব ছড়াচ্ছে : মির্জা ফখরুল

১৬

রাজধানীতে মসজিদের আগুন নিয়ন্ত্রণে

১৭

স্ত্রী-সন্তানের পর চলে গেলেন সোহেলও

১৮

দেশের রিজার্ভ আরও বাড়ল

১৯

মাদকসহ গ্রেপ্তার যুবদল ও কৃষক দলের নেতা বহিষ্কার

২০
X