২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকোটি ছিল চরম দুর্ভোগের কারণ। প্রায় ১২ বছর আগে স্বেচ্ছাশ্রমে মেঘনা নদী সংলগ্ন গরমবাজার নামে খালের ওপর সাঁকোটি নির্মাণ করেছিল গ্রামবাসী। এরপর প্রতি বছরই মেরামত করে পারাপারের জন্য এটি ব্যবহার করছে এলাকাবাসী। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল।
লোকজন উঠলেই থরথর করে কাঁপত। তবু বাধ্য হয়েই সাঁকোটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছিল শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় গ্রামবাসী। সর্বশেষ সোমবার বিকেলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদারের সহযোগিতায় স্থানীদের উদ্যোগে দুটি বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে নতুন করে কাঠের সাঁকো নির্মাণকাজ শুরু করেছে।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের মেঘনা নদী সংলগ্ন চরইন্দ্রুরিয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া গরমবাজার খালের ওপর ২০০ ফুট লম্বা একটি এবং ১০০ ফুট লম্বা কাঠের দুটি সাঁকো নির্মাণ করেছেন এলাকাবাসী। সেই দুটি সাঁকো পেরিয়ে খাসেরহাট, চরবংশী, চরইন্দ্ররীয়া ও গরমবাজার গ্রামের অন্তত দুই হাজার লোক পারাপার হয়ে থাকেন। সাঁকোর উত্তর পাড়ে চরইন্দ্রুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আর দক্ষিণপাড়ে উত্তর চরবংশী ইউপি পরিষদ, ইন্দ্রুরিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, চরবংশী দাখিল মাদ্রাসা, চরবংশী জয়নালিয়া মাধ্যমিক এবং চরবংশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত।
তাই দক্ষিণ চরবংশী, আলতাফ মাস্টারের ঘাট, চর জালিয়া গ্রামের অন্তত দেড়-দুই হাজার লোককে প্রতিদিন গরমবাজার খাল পারাপার হতে হয়। এ কারণে স্থায়ী দুর্ভোগ লাঘবে সরকারিভাবে ছোট দুটি সেতু নির্মাণের দাবি গ্রামবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৯ দিন ধরে গরমবাজার খালে প্রায় ২০০ ও ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের পৃথক দুটি কাঠের সেতু নির্মাণ করছেন গ্রামবাসী। শেষ হতে ২০ দিন লাগবে নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে ১টি সেতু দিয়ে লোকজন পারাপারও হতে শুরু হয়েছে। সেতুর সামনে ছোট আরও ১টি কাঠের সেতু এবং পাশের ফসলি জমির মাটি নিয়ে বিশাল বড় গর্তও ভরাট করা হয়েছে।
গরমবাজার গ্রামের বাসিন্দা মো. সাইজুদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এই খালটা দিয়ে লোকজন পারাপারে খুবই সমস্যা। আমরা গ্রামবাসী একটি কমিটি করে আমাদের নিজেদের উদ্যোগে ২০০৭ সালে এই সাঁকোটি নির্মাণ করেছিলাম। তখন এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে গ্রামবাসীর অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছিল। চেয়ারম্যান, মেম্বার ও আমলাদের শরণাপন্ন হলে তারা আশ্বাস দেন সেতু নির্মাণের। কিন্তু সেই দাবি পূরণ হয়নি। চলতি বছর আমরা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছেন এবং একটি অনুদান দেন। তাতে আমাদের কাজ সম্পন্ন হয়নি। পরে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে আরও ৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা জোগান দিয়ে কাঠের দুটি সেতু নির্মাণ করছি।
সেতু নির্মাণকাজের আরেক উদ্যোক্তা শিক্ষানুরাগী আরিফ হোসেন বলেন, একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল এখানকার মানুষ। গ্রামাবাসীর অর্থায়নে প্রতিবছরই একটি বাঁশের সাঁকো সংস্কার করে পারাপার হয়ে আসছি। চলতি বছর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি এখানে ডোনেশন করেন বাকিটা গ্রামবাসীর অর্থায়নে করেছি। কিন্তু যেভাবে করেছি তাতে হয়তো দুই বছর যেতে পারে। স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। আমাদের দাবি, সরকারি উদ্যোগে এখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক।
সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাস্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, গরমবাজার খালের ওপর দীর্ঘদিন ধরে ওখানকার লোকজন একটি বাঁশের দুটি সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে আসছে। চলতি ইউপি পরিষদ থেকে তাদের অনুদান দেওয়া হয়েছে এবং আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্থ জোগান দেই দুটি কাঠের সেতু নির্মাণ করার জন্য। ওখানে যাতে ১টি স্থায়ী সেতু নির্মিত হয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করছি, দ্রুত গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।
এলজিইডির রায়পুর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মো. সুমন মুন্সি বলেন, দুটি সাঁকোর জায়গায় লোহার ব্রিজ প্রকল্পে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।
মন্তব্য করুন