আবুল হাসান, গাজীপুর
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গাজীপুরে শেখ রেহানা পরিবারের বিপুল সম্পদ

সদ্য সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বাগানবাড়ি। ছবি : কালবেলা
সদ্য সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বাগানবাড়ি। ছবি : কালবেলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর সদ্য সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের মা-বাবার নামে মিলেছে বিপুল সম্পদ। দুদকের অনুসন্ধানে এবার খোঁজ মিলেছে ‘টিউলিপ’স টেরিটরি’ নামের বিশাল বাগানবাড়ি। তবে জৌলুস হারিয়ে টিউলিপস টেরিটরি যেন এখন এক ঝরা ফুলের বাগান। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চিহ্ন বাগানটির বিভিন্ন স্থানে। এ ছাড়া শেখ রেহানা ও তার পরিবারের সদস্যদের আরও তিনটি বিলাসবহুল বাংলো ও বাগানবাড়ির সন্ধান মিলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কানাইয়া এলাকায় টিউলিপ’স টেরিটরি’। শেখ হাসিনার ভাগনি সাবেক যুক্তরাজ্য মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের নামে ৩০ বিঘার বাগানবাড়িতে আছে বিশালাকার পুকুর, শান বাঁধানো ঘাট, অভিজাত ডুপ্লেক্স ও বাংলো। টাইলসে মোড়ানো নামফলকে ইংরেজিতে লেখা-‘টিউলিপ’স টেরিটরি, কানাইয়া, গাজীপুর, ২৫ ডিসেম্বর ২০০৮।’ রক্তরাঙা ফুলে মোড়ানো প্রধান ফটকের দেয়ালে লেখা বাগান বিলাস। কালো লোহার ফটক পার হয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখ আটকে যায় সারি সারি সুপারি বাগানে। বাগানবাড়ির ভেতরে সারি সারি গাছের মাঝে পাকা রাস্তা ধরে ৫-৭ মিনিট হেঁটে যাওয়ার পরই বিশালাকৃতির পুকুর। লাল টাইলসে মোড়ানো শান বাঁধানো ঘাট। ঘাটলার পাশে বসার জন্য পাকা ছাউনি। পাশের আরেকটা পুকুর দেখতে দিঘির মতো বিশাল। তবে ৫ আগস্টের পর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি এখন অনেকটা পরিত্যক্ত। দেখভালের জন্য আছেন চারজন কেয়ারটেকার। আর টিউলিপের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নেন।

কর্মচারীরা জানান, ৫ আগস্টের পর স্থানীয় কিছু লোকজন দেওয়াল টপকে বাগানবাড়ির ভেতরে ঢুকে অভিজাত বাংলোতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। বাংলোতে থাকা সব মালামাল হামলাকারীরা নিয়ে যায়। আগে সফিক সিদ্দিক, মেয়ে টিউলিপ, ছেলে ববি আসলেও এখন কেউ আসে না।

বাড়ির একজন কেয়ারটেকার জানান, এটা শেখ রেহানার জামাই শফিক সাহেবের বাগান। আমরা এখানে চারজন আছি যার মধ্যে একজন দারোয়ান। আমরা বাগানে কাজ করি, আমাদের বেতন প্রতি মাসে দেওয়া হয়। এখানে ৫ আগস্ট ভাঙচুর হয়।

অপর কেয়ার টেকার আব্দুর রহমান বলেন, এটি শফিক স্যারের বাগান বাড়ি। তিন বিঘা জমি কেনার পর আস্তে আস্তে বাড়িয়েছে। প্রতি সপ্তাহে স্যার আসতেন। ভাঙচুর ও রাস্তা খারাপ থাকায় তিনি এখন আর আসে না। শীতের মৌসুমে বছরে একবার টিউলিপ আপা, ববি ভাই আসত।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৩ বিঘার বিরোধপূর্ণ একটি জমি কিনে টিউলিপ’স টেরিটরি বাগানবাড়ির কাজ শুরু করেন শফিক সিদ্দিক। পরে ধাপে ধাপে জমি কিনে বিরাটাকার বাগান বাড়ি তৈরি করা হয়। এখানে প্রতিবছর শীতের সময় শেখ রেহানা ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বাগানবাড়িতে যেতেন। বাগানের ভেতর বড় ডুপ্লেক্স বাংলোতে থাকতেন তারা। থাকতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আনাগোনা।

স্থানীয়রা বলেন, একটা ঝামেলাপূর্ণ জমি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শফিক সাহেব কিনে নেন। এরপর আরও জমি কিনে বাগানবাড়ি করেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের কপিতে রয়েছে ড. শফিক সিদ্দিকের নাম। এ ছাড়া স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শেখ রেহানা ও তার পরিবারের নামে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাংলাদেশ স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পূর্ব পাশে অবস্থিত ১৫-১৬ বিঘার উপরে আরেকটি বাংলো আছে। যেটার মালিক শেখ রেহানা। প্রতিবছর শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনা একান্তে সময় কাটাতে সেখানে যেতেন। এ ছাড়া সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা মাঝেমধ্যে সেখানে বৈঠক করতেন। ফাউকাল ও বাঙ্গাল গাছ এলাকায় শেখ রেহানা ও তার স্বজনদের নামে বাংলো ও ভূসম্পত্তি রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে একটি বহুতল ভবন রয়েছে। সেখানে আছে নিটিং কারখানা।

ওই কারখানার একজন ম্যানেজার জানান, কারখানার পাশে শেখ রেহানা তার ১০ তলা একটি ভবন কিছু দিন আগে বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে ভূমি অফিসে এ ব্যাপারে তথ্য জানতে চাইলে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন পালোয়ান।

এদিকে গাজীপুরে রেহানা পরিবারের বাগানবাড়ি ও বিপুল সম্পদের দালিলিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে কাজ করছে দুদকের অনুসন্ধান টিম।

জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন বলেন, শেখ রেহানা ও তার পরিবারের সম্পদ ও জমির খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রাজস্ব বিভাগ থেকে তথ্য আসলে বিস্তারিত বলা যাবে।

তিনি বলেন, আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। আমাদের কাছে যখন দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা আসবে তখন আমাদের রিপোর্ট করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম চলছে। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রাজস্ব বিভাগ কাজ করছে। তাদের রিপোর্ট আসুক।

জয়দেবপুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টিউলিপ’স টেরিটরি বাগানবাড়িতে ৫ আগস্টের আগে ঢাকা থেকে নিয়মিত লোকজন যেত। তবে এখন সেখানে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রচণ্ড মাথাব্যথা? দূর করবেন যেভাবে

প্রযোজকের কু-প্রস্তাবের শিকার পায়েল

যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি আমিনুলের

চবির ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন / বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে চালু ছিল ক্লাস-পরীক্ষা, হয়নি আলাদা আয়োজন 

আদালতের নিরাপত্তা বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

পারিবারিক কলহ, স্ত্রীর পিঁড়ির আঘাতে স্বামী নিহত

স্ত্রীসহ মহীউদ্দীন খান আলমগীরেরর ৩৩ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ 

খুলনা শিশু হাসপাতালের নতুন তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রদীপ দেবনাথ

অক্টোবর মাসে সড়কে ঝরেছে ৪২৩ প্রাণ, আহত ৫৮৯ 

হবিগঞ্জ হাসপাতালে নার্সকে মারধরের ঘটনায় কর্মবিরতি

১০

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়, হিমেল হাওয়ার দাপট

১১

আসছে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি, শিক্ষকের শূন্যপদের চাহিদা চাইল এনটিআরসিএ

১২

‘জয় বাংলা’ গানের সঙ্গে টিকটক ভিডিও বানিয়ে পোস্ট, কলেজছাত্র গ্রেপ্তার

১৩

দশ মাসে রাজধানীতে ১৯৮ হত্যাকাণ্ড : ডিএমপি

১৪

বিদেশি তরুণীকে একা পেয়ে কুপ্রস্তাব-অশালীন আচরণ, যুবক গ্রেপ্তার

১৫

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে এভারকেয়ার হাসপাতালের র‍্যালি 

১৬

মারা গেলেন ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী

১৭

এবার পিএসজির কাছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি এমবাপ্পের

১৮

ভারতীয়দের জন্য দুঃসংবাদ!

১৯

মাগুরায় গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন, পুড়ে গেছে কাগজপত্র

২০
X