চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে চাঞ্চল্যকর মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর হত্যাকাণ্ডের তিন আসামিকে মঞ্চে বিশেষ অতিথিদের আসনে বসিয়ে উঠান বৈঠক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার ইছানগর গ্রামে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ৮৯ নম্বর বিট পুলিশিং কমিটির জনসচেতনতামূলক সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর হত্যাকাণ্ডের তিন আসামি আজগর আলী, মোহাম্মদ রাশেদ রানা ও হোসাইন মামুন।
হত্যার শিকার নিহত মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের বাড়ির সামনের উঠানে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্ট হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।
জানা যায়, গত ২৪ আগস্ট বিকেলে কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর গ্রামে সিএমপি ৮৯ নম্বর বিট পুলিশিং কমিটি জনসচেতনতামূলক সভার আয়োজন করে। ওসি (তদন্ত) মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে ও ৮৯ নম্বর বিট পুলিশিং ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিএমপি কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন। কিন্তু উঠান বৈঠকে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে একই মঞ্চে বসেন ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর কর্ণফুলী ডক এলাকায় ইছানগর গ্রামের বাসিন্দা ইমতিয়াজ উদ্দিনের পুত্র মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুনের তিন আসামি আজগর আলী, মোহাম্মদ রাশেদ রানা ও হোসাইন মামুন। ওই হত্যাকাণ্ডের মামলায় পুলিশের চার্জশিটে মোহাম্মদ রাশেদ রানা ও হোসাইন মামুনকে মূলহোতা ও প্রধান আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। চার্জশিটভুক্ত তিন আসামি হলেন- মৃত রবি আলীর ছেলে আজগর আলী পাপন, মোহাব্বত আলীর ছেলে মোহাম্মদ রাশেদ রানা ও হোসাইন মামুন। পরবর্তীতে আসামিরা রাজনৈতিকভাবেও স্থান করে নেয়। মামলার আসামি রাশেদ রানা কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, আজগর আলী চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসাইন মামুন চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি।
এ বিষয়ে পুলিশের কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন বলেন, মঞ্চে চার্জশিটভুক্ত ব্যক্তিদের বসার দায়টা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। অনুষ্ঠানে সামনে বসা ছিল স্থানীয় তিনজন জনপ্রতিনিধি। আগে থেকে ওই ব্যক্তিদের আমরা চিনতাম না। চিনলে কখনো তাদের মঞ্চে বসতে দিতাম না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আর ডিউটি অফিসার অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। আমি অতিথি ছিলাম। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আমি জানি না। মামলার বাদী নিহত মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম বলেন, আসামিদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে আমরা মর্মাহত। এতে করে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কাবোধ করছি।
নিহত মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ছোট ভাইও এ ঘটনায় গুরুতর আহত সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আসামিরা এমনিতে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবার ও সাক্ষীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। সাক্ষীদের মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। এখন চার্জশিটভুক্ত আসামিদের পুলিশ মাদকবিরোধী সমাবেশে অতিথি করায় সাক্ষীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে।
তবে এ বিষয়ে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করা কর্ণফুলী থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর কর্ণফুলী ডক এলাকায় চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও মাদক ব্যবসায় কর্মকাণ্ডে বাধা দিলে ক্ষিপ্ত ইছানগর গ্রামের বাসিন্দা ইমতিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে দিনেদুপুরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কর্ণফুলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। পুলিশের চার্জশিটে অভিযুক্তদের নাম উঠে আসে। চাঞ্চল্যকর মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। এ আদালত দীর্ঘদিন বিচারকশূন্য থাকায় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। ৪৫ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন