গত বছরের আগস্টে কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় জেলার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। এতে দুই উপজেলার মানুষ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়। আকস্মিক এই বন্যায় দুই উপজেলায় ফসল ও অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি ২২০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরমধ্যে বুড়িচং উপজেলায় ৭০ কিলোমিটার ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ১৫০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কুমিল্লা-মিরপুর সড়কের বিভিন্ন অংশ।
তবে স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও কুমিল্লা-মিরপুর সড়কে বন্যার ক্ষতচিহ্ন এখনও স্পষ্ট হয়ে আছে। ভাঙাচোরা সড়কের সংস্কার না হওয়ায় দুই উপজেলার মানুষের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙাচোরা হওয়ার কারণে যাত্রীদের সময়ের অপচয়সহ বিভিন্ন সময়ে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় প্রতিদিন স্থানীয়রাসহ দূরদূরান্তের প্রায় এক হাজার মানুষ নানা প্রয়োজনে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। বন্যা শেষে ৮ মাস গত হলেও এখনও এই জনবহুল সড়কে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। কেনো এখনও সড়কটি সংস্কার হচ্ছে না জানেন না দুই উপজেলার মানুষসহ এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা।
এদিকে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছেন, তিন তিনবার প্রচেষ্টা করেও তারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি। তবে অচিরেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সড়কটির সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সরেজমিনে সড়কের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লা-মিরপুর সড়কটি কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা থেকে শুরু হয়ে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা হয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে সংযুক্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের গিয়ে মিশেছে। যার ফলে মানুষের যাতায়াতের জন্য এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। গত বছরের আগস্টে হওয়া ভয়াবহ বন্যার আগেও সড়কটির অবস্থা ততটা ভালো ছিল না। ভয়াবহ বন্যার কারণে সড়কটির অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশের পিচ ঢালাই উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। আর সড়কের এই বেহাল দশার কারণে এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে দ্বিগুণ সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন অংশে খানাখন্দের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। সড়কটির বেশিরভাগ অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সড়কের যাত্রী, রোগী, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তে পানি জমে সড়কটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
কুমিল্লা-মিরপুর সড়কের নিয়মিত সিএনজি চালক শামসু মিয়া বলেন, গত প্রায় ২৫ বছর ধরে এ সড়কে গাড়ি চালাই। বন্যার আগে থেকেই সড়কটি সংস্কারের কথা শুনছিলাম। তবে বন্যার পরে সড়কটির অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এ সড়কে এখন গাড়ি চালাতে ভয় লাগে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে পারি। সড়কটির বিভিন্ন অংশ ভাঙাচোরা হওয়ার কারণে সড়কে খুব ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে হয়। শীঘ্রই সড়কটি সংস্কার না হলে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠবে।
মাহিদুর রহমান নামে এ সড়কের একজন যাত্রী বলেন, কবে থেকেই শুনছি সড়কের কাজ ধরবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এর কোনো লক্ষণ চোখে পড়ছে না। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়, সময়ও বেশি লাগে। একবার কুমিল্লা গেলে আসলে গাড়ির ঝাঁকুনির কারণে ব্যথার ওষুধ খেতে হয়। গাড়িতে উঠে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত দুর্ঘটনার ভয়ে থাকি। সড়কটির সংস্কার করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
মাঈনুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, কুমিল্লা-মিরপুর সড়কটি একটি অবহেলিত সড়ক। অথচ নানা প্রয়োজনে এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় হাজারখানেক মানুষ চলাচল করে। বৃষ্টি হলে সড়কের এমন কিছু জায়গা আছে যেখান দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়ারও অবস্থা থাকে না। সড়কের ছোট বড় গর্তের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা কালবেলাকে বলেন, কুমিল্লা-মিরপুর সড়কটির টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা এটা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কাজ করছি। আশা করছি শিগগিরই আমরা ওই সড়কের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সড়কটি সংস্কার করতে পারব।
মন্তব্য করুন