গুটি আম নামানোর মধ্য দিয়ে রাজশাহীর আমবাগানগুলো থেকে আম পাড়ার মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৬ মে) থেকে জেলার চাষিরা কেবল পরিপক্ব গুটি আম পাড়তে পারবেন। সে অনুযায়ী সীমিত আকারে বৃহস্পতিবার থেকে আম পাড়া শুরুও হয়েছে। তবে গুটি আম এখনো ভালোভাবে পরিপক্ব না হওয়ায় সব বাগানে পাড়া শুরু হয়নি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, যা লক্ষ্যমাত্রা আছে তাতে এবার রাজশাহীর আম থেকে চাষিরা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় করবে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাগানে অল্পসংখ্যক চাষি ও ব্যবসায়ী আম পাড়ছেন। এখনো বাগানে গুটি জাতের আম পাকা শুরু হয়নি। আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। পবার আম ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গুটি আম পাড়া শুরু হয়েছে। বানেশ্বর হাটে আম নিয়ে যাব বিক্রির জন্য। তবে প্রথম দিন খুব বেশি আম পাড়ার পরিকল্পনা নেই। এখনো আম পাকেনি। তাই বাজার জমতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।’
আরেক আম ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন জানান, রাজশাহী নগরীর বুধপাড়া ও কোর্ট এলাকায় তার বাগান রয়েছে। সীমিত আকারে আম পাড়ছেন। কয়েক দিন পর পাকলে বেশি করে পাড়া হবে। দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু আজ প্রথম দিন। তাই আমের দাম ঠিকঠাক বলা যাচ্ছে না। আশা করছি, ভালো দাম পাব। কারণ এবার আম কম ধরেছে।
পবার চাষি শরিফুল ইসলাম দামকুড়া হাট থেকে নামিয়েছেন আম। তিনি বলেন, তার নিজস্ব দুই বিঘার একটি বাগান আছে। এখানে একটি গাছের গুটি আম পেড়েছেন। যা আম নামিয়েছেন তার সবই তিনি বাগানেই ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এবার আম অনুযায়ী বেশ ভালো দাম পেয়েছি। আশা করছি সব কিছু ঠিক থাকলে এ বছর বেশ ভালো কাটবে।
তবে মৌসুমের শুরুতে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে গুটি জাতের আম। কৃষকের আশা, এবার তারা বেশ ভালো দাম পাবেন। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এবার আম থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় হবে।
ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এবার গোপালভোগ আম সংগ্রহ করা যাবে ২২ মে থেকে। লকনা বা লক্ষণভোগ ও রানীপছন্দ আম পাড়া যাবে ২৫ মে থেকে। এ ছাড়াও হিমসাগর ও খিরসাপাত ৩০ মে, ল্যাংড়া আম বা বানানা ম্যাংগো ১০ জুন, আম্রপালি বা ফজলি আম ১৫ জুন নামানোর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বারি-৪ আম ৫ জুলাই, আশ্বিনা আম ১০ জুলাই ও গৌড়মতি ১৫ জুলাই থেকে নামাতে পারবেন বাগান মালিকরা। তাছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ জাতের সারা বছর পাড়া যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর জেলায় আম চাষ হচ্ছে ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ টন। তবে গত মৌসুমে জেলায় আমের আবাদ হয়েছিল ১৯ হাজারের ৬০২ হেক্টর জমিতে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহীর আম বাজারজাত শুরু হয়েছে। চাষিরাও আম নামাতে পারবেন। তবে বৃহস্পতিবার থেকে কেবল গুটি জাতের আম নামাতে পারবেন। এবার বেশ ভালো আমের ফলন হয়েছে, যার লক্ষ্যমাত্রা আছে তাতে এবার রাজশাহীর আম থেকে চাষিরা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় করবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, রাজশাহীর ঐতিহ্য হচ্ছে আম। বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে তাই প্রতি বছরই তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এবারও কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতেই ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ের আগে যদি কোনো কৃষক বা ব্যবসায়ী অপরিপক্ব আম নামান তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক প্রশাসনিক নজরদারি থাকবে।
মন্তব্য করুন