রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে ফিরছে তিন দশকেরও বেশি সময় পর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ক্যাম্পাস আবারও সাক্ষী হতে যাচ্ছে নতুন ইতিহাসের। ১৯৮৯ সালের পর থেকে বন্ধ থাকা এ নির্বাচন আবারও ফিরে আসছে ২০২৫ সালে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রতীক্ষিত রাকসু নির্বাচন।
এর আগে আগামী ২০ আগস্ট থেকে শুরু হবে তিন দিনব্যাপী মনোনয়নপত্র বিতরণ। ক্যাম্পাস এখন সরগরম, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার ঝড়। তবে এতদিনের ব্যবধানে রাকসুর সর্বশেষ নির্বাচনের স্মৃতি যেন ইতিহাসের পাতায় চাপা পড়ে গেছে।
১৯৮৯ সালের পর রাকসু নির্বাচন যেন হারিয়ে যাওয়া এক অধ্যায়। আজকের শিক্ষার্থীদের কাছে সেটি শুধুই ইতিহাস। তবে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও লিখতে যাচ্ছে নতুন এক কাহিনি।
ক্যাম্পাসজুড়ে এখন সবার মনে প্রশ্ন একটাই- এবারের নির্বাচনে কোন তরুণ নেতৃত্ব আসবে সামনে? আর তারা কি অতীতের মতো ক্যাম্পাস রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা বয়ে আনতে পারবে?
১৯৮৯ সালের আবহ : ১৯৮০-এর দশকের শেষ সময়। রাজনীতি উত্তাল, সারা দেশে আন্দোলনের ঝড়। সেই উত্তপ্ত সময়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন। সেদিন ভোটারদের লম্বা লাইন, প্রচারণায় মুখরিত ক্যাম্পাস- সব মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
রাকসু তখন শুধু একটি ছাত্র সংসদ ছিল না; ছিল রাজশাহীর ছাত্রসমাজের দাবি-দাওয়ার কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৮৯ সালের সেই নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন একঝাঁক তরুণ নেতা, যারা পরবর্তীতে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে নির্বাচিত যারা : সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে (১৯৮৯) গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হন- সহ-সভাপতি (ভিপি) অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী (বর্তমানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) রুহুল কুদ্দুস বাবু, উপ-সহ-সভাপতি (প্রভিপি) মো. আব্দুল কাদের সরকার, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) আলমগীর হোসেন, ক্রীড়া সম্পাদক মো. সাকিলুর রহমান সোহাগ, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক মুস্তাফিজুর আলি খান পাপ্পু, সাহিত্য সম্পাদক মো. শামসুল ওয়াসে, সহ-সাহিত্য সম্পাদক মো. আব্দুল মান্নান, প্রমোদ সম্পাদক আজম শান্তনু, সহ-প্রমোদ সম্পাদক ইমামুল আজম শাহী, সাধারণ কক্ষ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম, সহ-সাধারণ কক্ষ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান ফসি, মহিলা সম্পাদক বৃত্তা রায় দীপা, সহ-মহিলা সম্পাদক মাহবুবা ইয়াসমিন রিতা, পত্রিকা সম্পাদক জাকিরুল হক টিটন, সহ-পত্রিকা সম্পাদক জগদীশ রায় জনি, সমাজসেবা সম্পাদক মো. করিম শিকদার ও সহ-সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন আসলাম সরকার।
বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানেন না রাকসুর শেষ নির্বাচনে কারা নেতৃত্বে এসেছিলেন। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল আলম বলেন, আমরা শুধু শুনেছি, রাকসু ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র সংসদ। কিন্তু ৩৫ বছরের ব্যবধানে ইতিহাস থেকে আমরা অনেকটা বিচ্ছিন্ন। ভিপি বা নেতারা কারা ছিলেন তা জানি না। আমাদের উচিত এসব তথ্য সংরক্ষণ করা।
রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে রাকসুর একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে দেব। এতে থাকবে কারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, কতবার নির্বাচন হয়েছে এবং এবারের নির্বাচনটি কততম।
তিনি আরও বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সব সংগঠনকে একত্র করেছি। ভোটার তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে রাকসুর ইতিহাস প্রচারের দায়িত্ব মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
মন্তব্য করুন