কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাতকারী ও অযোগ্যদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগে পদত্যাগ করেছেন বিএনপির ৪ নেতা।
শুক্রবার (১৬ মে) দুপুরে উলিপুর পৌরশহরের হাজী সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করেন তারা।
পদত্যাগকারীরা হলেন- উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম ফুলু, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে ছাবা স্টার, যুগ্ম আহ্বায়ক মতলেবুর রহমান মঞ্জু ও সদস্য আমিনুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন আমিনুল ইসলাম ফুলু। তিনি বলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তারিক আবুল আলা চৌধুরী বিগত ১৭ বছরে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে উলিপুর পৌরসভা মেয়র নির্বাচিত হয়ে উলিপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিছুর রহমানকে প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করেন। পরে তার ওপর সব দায়িত্ব দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্ব-শরীরে অংশগ্রহণ করে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জাফর আলীর পক্ষে নির্বাচন করে তাকে জয়ী করে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন। কিন্তু তাকে সদ্য ঘোষিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আমিনুল ইসলাম ফুলু বলেন, জেলা নেতারা আমাদের মতামত না নিয়ে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী দোসর সহিদুর রহমানকে সদ্য ঘোষিত উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ১৮ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। কমিটির ১৬ নম্বর সদস্য সাইফুল ইসলাম বাদল ও পৌর আহ্বায়ক কমিটির ১৭ নম্বর সদস্য রফিকুল ইসলাম বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফ্যাসিস্ট গোলাম হোসেন মন্টুর পক্ষে নৌকা মার্কার ভোট প্রার্থনা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে অর্থের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী ও আওয়ামী সমর্থিত ও আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির কর্মীদের পদ-পদবি বণ্টন করা হয়েছে। এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করাসহ ধিক্কার ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। অনতিবিলম্বে এই সদ্যঘোষিত কমিটি দুটি বাতিলপূর্বক পুনরায় ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে কমিটি প্রদানের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম ফুলু, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মতলেবুর রহমান মন্জু, সদস্য আমিনুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জাফর সোহেল রানা, রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক জিএস ফিরোজ কবির কাজল, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আহমেদ, নাজমুল হুদা, মঈন আহমেদ, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পারভেজ সরদার, সাবেক ছাত্রনেতা স্বপন কুমার সাহা, উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান রাজু, সদস্য সচিব ফাজকুরুনী আহমেদ প্রমুখ।
এ বিষয়ে সদ্য ঘোষিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তারিক আবু আলা চৌধুরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। বিগত দিনে আমি পৌর বিএনপির সভাপতি, পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি পদে ছিলাম। উলিপুরের মানুষ জানে দীর্ঘদিন ধরে কারা বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। জেলা কমিটি ত্যাগীদের মূল্যায়ন করেছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ জানান, বিগত দিনে বিএনপির পদে থেকে অত্যাচারিত হয়ে আন্দোলন সংগ্রামে যারা নেতৃত্বে দিয়েছেন বর্তমানে তাদেরই মূল্যায়ন করা হয়েছে। যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারেনি তারাই বিতর্ক সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া যাকে জাতীয় পার্টির নেতা বলা হয়েছে উনি বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি পদে রয়েছেন।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এখনো পদত্যাগের কোনো পত্র হাতে পাইনি। যারা যোগ্য তাদেরই নেতৃত্বে আনা হয়েছে।
অর্থের বিনিময়ে কমিটি দেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা বলেছে তাদেরই বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে। উলিপুরে বিবদমান দুটি গ্রুপ রয়েছে। বিএনপি দেশের সব চাইতে বড় দল, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে, মান-অভিমান থাকবেই। এখানে অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয়টি মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিয়েছি।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৪ মে) বিকেলে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও সদস্য সচিব আলহাজ সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উলিপুর উপজেলা বিএনপির ২১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ও পৌর বিএনপির ২৫ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
আর্কাইভ 
| ০৯ জুন ২০২৫ 
