দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ বলেছেন, গত ছয় মাসে আমরা যে পরিস্থিতি দেখলাম তাতে বাংলাদেশের দুর্নীতির অবস্থা ভয়াবহ। এর পরিধি ব্যাপক এবং অত্যন্ত গভীর। কারণ গত ১৬ বছর দুর্নীতির চাষাবাদ হয়েছে এই দেশে। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া দুর্নীতি রোধ করা অসম্ভব।
রোববার (২৫ মে) সকালে খুলনার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদকের গণশুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন।
খুলনা সদরে অবস্থিত সরকারি দপ্তরসমূহে সেবাবঞ্চিত ও হয়রানির শিকার নাগরিকদের অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি এ গণশুনানি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এসময় খুলনাবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো জায়গায় ঘুষ দেবেন না। আপনারা প্রতিবাদ করেন। আমি আপনাদের এটা বলছি না- আমাদের বাচ্চারা যারা নিরস্ত্রভাবে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল তাদের মতো আপনারাও দাঁড়ান। আমি বলছি না- আপনারাও রক্ত দেন। আমি শুধু বলছি, ঘুষ দেবেন না। আপনারা প্রতিবাদ করেন। এতে আপনাদের কষ্ট হবে, কাজ একটু দেরিতে হবে। কিন্তু সে আর ঘুষ খেতে পারবে না।
সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটা সংস্কৃতি চালু হয়েছে, সেবা গ্রহীতার টাকায় সেবাদাতা পালিত। মনে হয়- যে সেবাদাতা হলো- প্রভু, আর সেবা গ্রহীতা হলো- ভৃত্ত। এই সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগীরা সরাসরি অভিযোগ উপস্থাপন করেন— যার মধ্যে ঘুষ, হয়রানি, অনিয়ম ও দীর্ঘসূত্রিতার মতো বিষয় উঠে আসে। দুদক এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশনা বা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। গণশুনানি উঠে আসা ১১৮টি অভিযোগের মধ্যে ৫৭-৫৮টি তৎক্ষণাৎ নিষ্পত্তি করা হয়।
গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও বিশেষ অতিথির ছিলেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ।
গণশুনানিতে প্রধান অতিথি দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, জনগণের দেওয়া ট্যাক্সের টাকায় সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন হয়। যাদের টাকায় আমাদের বেতন হয়, আমরাই আবার তাদের প্রভু সেজে যাই। সরকারি কর্মচারীরা আল্লাহর দেওয়া যোগ্যতার সম্পূর্ণ ব্যবহার করে ইমানদারি সঙ্গে নাগরিকদের সেবা দিতে দায়বদ্ধ। যে সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করে, সে জ্ঞানত অন্যায় করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিজ নিজ অবস্থানে প্রত্যেকেই বিচারক। যদি আমরা আমাদের পরিবারে নিজের আয়ের চেয়ে বেশি উপহার বা তৈজসপত্র দেই তবে সন্তানদের সামনে কীভাবে জবাবদিহি করবো। আমরা নিজে সৎ থাকব এবং পরিবারবর্গকে সৎ পথে রাখব।
তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা হতাশ হবে না। পরিবারকে যেমন সেবা করতে হবে, তেমনি লব্ধ জ্ঞান প্রজাতন্ত্রের কাজে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে উদ্যোক্তা হতে হবে।
সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা সবাই দুর্নীতি বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, একই সঙ্গে মানসম্মত সেবা প্রদানের নিশ্চয়তাও দিতে হবে।
অনুষ্ঠান শেষে দুদক কর্মকর্তারা জানান, ভবিষ্যতেও এ ধরনের শুনানি অব্যাহত থাকবে এবং যে কোনো দুর্নীতির অভিযোগে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা পেতে হয়রানি, ঘুষ, দুর্নীতির শিকার সেবা প্রত্যাশী জনসাধারণ এবং সেবা প্রদানকারী সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদ। এসময় বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার, দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, পুলিশের খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার ও পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন বক্তৃতা করেন। গণশুনানিতে খুলনা সদরে অবস্থিত সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, বিশিষ্ট নাগরিক ও অভিযোগ উত্থাপনকারী ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিল।
মন্তব্য করুন