সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মকর্তা শাকির হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও কর্মচারীদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগপত্রে তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, জালিয়াতি, হুমকি-ধামকি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করেছেন অফিস কর্মচারীরা।
শ্যামনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মচারী এসকে নুরুন্নবী, মহিউদ্দিন আহম্মেদ, মো. রফিকুল ইসলাম রক্তিম ইসলাম, মো. আবু আল শাহ আলম, মো. জিল্লুর রহমান লিখিতভাবে মহাপরিচালক (ঢাকা), পরিচালক (খুলনা বিভাগ) ও উপ-পরিচালক (সাতক্ষীরা) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগকারী কর্মচারীরা জানান, শাকির হোসেনের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অফিসের পরিবেশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
অফিসের কর্মচারী এসকে নুরুন্নবী জানান, শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর মেরামত ও সংস্কারের জন্য ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলেও শাকির হোসেন তার শ্যালক শাহ আলম ও অন্যান্য ঠিকাদারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেন। এর ফলে কোনো মানসম্মত কাজ না হওয়ায় কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
আরেক কর্মচারী রক্তিম ইসলাম জানান, তার হয়রানি ও হুমকির কারণে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমার বাবার জমি জবরদখলের ঘটনায় আমি ন্যায়বিচার পাইনি। আমার বেতন ও ভাতা নিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বেতন ফেরত দেওয়া হয়। এছাড়া রক্তিম ইসলামের বাবার জমি জালিয়াতির মাধ্যমে তার বন্ধুর নামে লিজ দেখিয়ে চিংড়ি চাষের জন্য ব্যবহার করা হয়। জমি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালে শাকির হোসেন জোরপূর্বক ৬০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, মেডিকেল অফিসার (এমওএমসিএইচএফপি) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে শাকির হোসেন উপ-পরিচালককে না জানিয়ে একদিনে ১০ কর্মচারীকে অন্তঃউপজেলা বদলি করেন, যা বিধিবহির্ভূত।
আবু আল শাহ আলম নামে আরেক কর্মচারী জানান, অভিযোগ করার পর মোবাইলে আমাদের সহকর্মী মো. জিল্লুর রহমানকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, যা আমার কাছে প্রমাণ আছে। শাকির হোসেন কর্মচারীদের কাছ থেকে কলা, কচু, হাঁস, মুরগি, মাছ, মাংস ইত্যাদি উপঢৌকন হিসেবে গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। অস্বীকৃতি জানালে তিনি শোকজ, বদলি বা চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন এবং কর্মচারীদের প্রতি অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করেন।
তিনি আরও জানান, গত ১৫ মে গাবুরা ইউনিয়নের পরিদর্শক রফিকুল ইসলামকে তার কার্যালয়ে ডেকে মারধর ও লাঞ্ছনা করে জোরপূর্বক তার পক্ষে লিখিত প্রত্যয়ন নেওয়া হয়। শাকির হোসেনের নামে ও তার স্বজনদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্লট, বাড়ি এবং জমি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা তদন্তে প্রমাণিত হতে পারে।
জিল্লুর রহমান নামে আরও এক কর্মচারী জানান, তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করলেই চাকরি হারানোর ভয় দেখানো হয়। তৎকালীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আঁতাত করে টাকার বিনিময়ে ১৫ নারীকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি হলেও তিনি ই-মেইল গোপন করে প্রতি স্বেচ্ছাসেবীর কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা হারে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। এমনকি তিনি মাতৃস্বাস্থ্য ও গর্ভবতী মায়েদের প্রশিক্ষণে পরিবার কল্যাণ সহকারীদের স্বাক্ষর জাল করে ১৪ হাজার ৪০০ টাকা সম্মানী ভাতা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া সাবেক পরিবার কল্যাণ সহকারী অনীতা বালার নামে অন্য ব্যক্তিকে সাজিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়।
অভিযোগগুলোর বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাকির হোসেন কালবেলাকে বলেন, এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমি আমার দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালন করছি। কিছু কর্মচারী ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। আমার অফিসে ৫৪ জন কর্মচারী। এর মধ্যে ৬ জন কর্মচারী এই ষড়যন্ত্র করছে।
শ্যামনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মচারীদের দাবি, শাকির হোসেনকে শ্যামনগর উপজেলা থেকে বদলি করা হোক এবং তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তারা আরও বলেন, আমরা চাই আমাদের কার্যালয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরে আসুক।
মন্তব্য করুন