কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চররাজিবপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১২ ঘণ্টা ধরে সব ডিজিটাল মোবাইল অপারেটর নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট ওয়াইফাই ও টেলিভিশনের ডিশ লাইন বন্ধ ছিল। পরে নেটওয়ার্ক ফিরে এলেও তা স্বাভাবিক হয়নি। এখনও যোগাযোগে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিট থেকে শনিবার (৭ জুন) ঈদের দিন সকাল ৮টা ১০ মিনিট ধরে টানা ১২ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর্যন্ত সব মোবাইল নেটওয়ার্ক সরবরাহ বন্ধ ছিল।
পরে শনিবার সকাল ৮টা ১১ মিনিটে নেটওয়ার্ক সার্ভিস স্বাভাবিক হলেও এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরের মোবাইল নেটওয়ার্কে কথা বললে এখনও নেটওয়ার্ক বিঘ্ন ঘটছে বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন। তবে কী কারণে মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে তা জানা যায়নি।
এছাড়া ডিশ ক্যাবল লাইন ও ওয়াইফাই সেবাও বন্ধ ছিল। পরে স্বাভাবিক হলেও ইন্টারনেট সেবা বিঘ্ন ঘটছে। পাশাপাশি টেলিভিশনে ভালোভাবে ছবি দেখতে পারছেন না গ্রাহকরা।
চর রাজিবপুর উপজেলা মাইম ইন্টারনেট ওয়াইফাই ব্যবসায়ী বুলবুল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, গতকাল শুক্রবার রাত ৮টা থেকে শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ওয়াইফাই সেবা বন্ধ হয়েছিল। পরে চালু হলেও ইন্টারনেট স্পিড নেই বললেই চলে।
তিনি আরও বলেন, ইন্টারনেট গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন- তারা ঠিক মতো ইন্টারনেট ওয়াইফাই সেবা পাচ্ছেন না। তাই দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি।
রাজিবপুর বাজারে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী শফি আলম ও হামিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ করে সব মোবাইল নেটওয়ার্ক চলে যায়। আমাদের বর্তমান ব্যবসাই হচ্ছে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের ওপরে। ঈদের সময় এমন হওয়ায় আমাদের প্রায় কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
খোকন মিয়া নামের এক গ্রাহক বলেন, নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ঈদে আমি কোনো আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ঈদের একটা সময় কারও সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারিনি। নেটওয়ার্কের এমন সমস্যা মাঝে মধ্যেই হয়।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আজ এখন ৪টা বাজে এখন পর্যন্ত নেটওয়ার্কের সমস্যা সমাধান করতে পারেনি তারা। বর্তমানে সবকিছুই হয় এই মোবাইলের মাধ্যমে, অথচ নেটওয়ার্ক বিছিন্নের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে জনসাধারণকে।
রৌমারী স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম, আবু সাইদ কাকন, ফারুক আহমেদ, আলতাফ হোসেন হিটলার, আবু বক্কর, তৈয়ব আহমেদ আকাশ, শফিকুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, হঠাৎ করে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটের সময় সব অপারেটর মোবাইল সিমগুলোতে নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। পরে ঈদের দিন শনিবার সকাল ৮টা ১১ মিনিটে মোবাইলে নেটওয়ার্ক পেলেও এখনও যোগাযোগে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এভাবে নেটওয়ার্ক বন্ধ করা ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যেন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। পরবর্তীতে যেন নোটিশ ছাড়া নেটওয়ার্ক বন্ধ না করা হয়।
স্থানীয় দাঁতভাঙ্গা বাজারের সিম রিটেইলার আব্দুস সালাম, আব্দুর রশিদ, মাইদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় থেকে মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাসহ অন্যন্যা সেবা গ্রাহকদের দিতে পারিনি। পরে আজ শনিবার সকালে নেটওয়ার্ক পেলেও কথা বলা এবং মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছি।
বাংলালিংক জামালপুর রিজিওনাল নেটওয়ার্ক অপারেশন কর্মকর্তা মনির হোসেন কালবেলাকে বলেন, নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি থাকে ফাইবার ক্যাবল তার দিয়ে জামালপুর ও শেরপুর মেইন কানেকশন দিয়ে রৌমারীর দিকে দেওয়া হয়েছে। রৌমারী এরিয়াতে ৮-১০ জায়গায় কিছু খারাপ লোক এই ফাইবার তার কেটেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের টিম রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাল্টিপল জায়গায় রি-ইন্সটল করে। পুরা কানেক্টিভিটি ডিসকানেক্ট হয়। এতে সব অপারেটরের সেবা বন্ধ ছিল। আমরা কাজ করছি, আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
মন্তব্য করুন