কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চররাজিবপুরে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজে ভোগান্তি চরমে উঠেছে। প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষ বিদ্যুতের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বিদ্যুৎ নিয়ে ট্রল করে সমালোচনা করছেন।
জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টা মধ্য ১৬-১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। বাকি ৬-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ আসে যায় এবং কিছু সময় বিদ্যুৎ থাকলেও তা লো-ভোল্টেজ। এতে বৈদ্যুতিক ফ্যান ও এসি চলে না। পাশাপাশি ফ্রিজে রাখা ফলমূল, মাছ ও মাংস নষ্ট হচ্ছে। প্রচণ্ড দাবদাহ আর দিনের বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ব্রয়লার খামারে মুরগি অসুস্থ হয়ে মরে যাচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে খামারিরা।
চর রাজিবপুরের কাচারিপাড়া এলাকার খামার ব্যবসায়ী শাহজাহান বাবু বলেন, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং এবং লো-ভোল্টেজে খামারের ব্রয়লার মুরগিগুলো অসুস্থ হয়ে মরে যাচ্ছে। ফলে এ ব্যবসায় এবার বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের টাকা মাস গেলেই গুনতে হয়। অথচ বিদ্যুৎ বিভাগ আমাদের সঙ্গে মশকরা করছেন। দ্রুত এর প্রতিকার চাই।
স্থানীয় সাংবাদিক সুজন মাহমুদ অভিযোগ করে কালবেলাকে বলেন, বিদ্যুতের টানা লোডশেডিং এবং লো-ভোল্টেজে সংবাদ লিখতে পারছি না। কারণ লো-ভোল্টেজ এ কম্পিউটার সাধারণত অন (চালু) করা যায় না। ফলে সারাদিনের নানা ঘটনা সংগ্রহ করে অফিসে পাঠাতে পারছি না।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের অবহেলায় লোডশেডিংয়ের কারণে সরকারি অফিস ও সাধারণ মানুষজন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। যদিও বা বিদ্যুৎ থাকে তা কাজে আসেনা কারণ লো-ভোল্টেজ। একই বিদ্যুৎ পাশের জেলা শেরপুর এবং জামালপুর জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ভালো অথচ ব্রহ্মপুত্র-কুড়িগ্রাম জেলা বিচ্ছিন্ন রৌমারী ও চররাজিবপুর উপজেলায় বিদ্যুতের এ সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে তাই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করছি জরুরি ভিত্তিতে এর সমাধান করা উচিত বলে জানান।
স্থানীয় রাজু আহমেদ, মামুন মোল্লা, সুখ বাদশা, আলতাফ হোসেন হিটলার, আইয়ুব হোসেন, আবু বক্কর, মাহাতাব হোসেন, শামীম আহম্মেদসহ অনেকেই বলেন, বিদ্যুতের যে অবস্থা তাতে আর কয়েকদিন এই অবস্থা থাকলে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে অন্য বিকল্প পথ বেঁচে নেবে। কারণ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ থাকে না। এতে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে।
রৌমারী জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মাহবুব আলম বলেন, প্রচণ্ড গরমে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার পাল্লা দিয়ে চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। ঝড়বৃষ্টি নেই তবুও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখছেন বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। কিছুসময় বিদ্যুৎ থাকলেও তা লো-ভোল্টেজ। এতে সাধারণ মানুষজন ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। দ্রুত বিদ্যুতের সমাধান চাই। পাশাপাশি উপজেলা শহরগুলোতে যেন সবসময় বিদ্যুৎ থাকে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধ করছি।
জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রৌমারী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, উৎপাদন কম থাকায় সর্বোচ্চ লোড চলছে। তার অফিসের আওতায় দুই উপজেলার প্রায় ৮০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা ২২ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১২ থেকে ১৪ মেগাওয়াট।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেরপুর থেকে আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ ৩৩ কেবি থাকার কথা কিন্তু এর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে লোডশেডিং কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করছি, দ্রুত লোডশেডিং কমে যাবে।
মন্তব্য করুন