

উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের চিলমারীতে হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। টানা কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে উপজেলার নিম্নআয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমজুর, ভ্যানচালক, রিকশাচালক, কৃষিশ্রমিক ও নদীনির্ভর শ্রমজীবীরা। কাজ না থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক ও নৌপথে চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। সারাদিন ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে এবং সূর্যের দেখা মিলছে না। আঞ্চলিক ও মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। শ্রমজীবীরাও ঠিকমতো কাজে বের হতে পারছেন না। কেউ কেউ বের হলেও পর্যাপ্ত কাজ পাচ্ছেন না। এতে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।
কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার রাজারহাটের কর্মকর্তা সুবল সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিরাজ করছে।
করাইবরিশাল চরের দিনমজুর আব্দুল করিম বলেন, ‘এহন ঠান্ডা এত বেশি যে সক্কাল বেলা ঘর থেইকা বাইর হওয়াই মুশকিল। কাজ নাই, রোজগারও নাই।’
রিকশাচালক আব্দুস সাত্তার জানান, শীতের কারণে যাত্রী কমে গেছে অনেক। সারা দিন ঘুরে যা পাই, তা দিয়া সংসার চলে না। তার ওপর ঠান্ডায় শরীরও ভালো থাকে না।
সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর ভিড় দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্করা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
চিলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবু রায়হায় বলেন, ‘এ পর্যন্ত শীতজনিত রোগে ৩৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি।’
ঠান্ডাজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আমিনুল ইসলাম (৬০), গোলজার হোসেন (৮০) বলেন, ‘কয়েক দিন ধইরা খুব ঠান্ডা লাগতেছে। কাশি-জ্বর বাড়তে বাড়তে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ঘরে গরম কাপড়ও ঠিকমতো নাই। শেষে অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হইছি। ডাক্তার কইছে, শীতে বেশি সাবধান থাকতে।’
অন্যদিকে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাব রয়েছে। অনেক এলাকায় এখনো শীতবস্ত্র সহায়তা পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
শীতের প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতেও। কুয়াশার কারণে সবজি ক্ষেত ও ইরি-বোরো বীজতলায় রোগের প্রকোপ বাড়ছে। কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, দীর্ঘদিন কুয়াশা ও শীত অব্যাহত থাকলে উৎপাদন ব্যাহত হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, ‘এ পর্যন্ত উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৩০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও সাড়ে ৪০০ কম্বল বিতরণের পর্যায়ে রয়েছে।’
মন্তব্য করুন