কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভুশ্চি এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ, লালমাই) আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একটি রেস্টুরেন্টেও ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা।
মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে ভুশ্চি বাজারে অবস্থিত আবদুল করিম মজুমদার মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনব্যাপী বাগমারা উত্তর-দক্ষিণ, পেরুল উত্তর-দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে ভুশ্চি বাজার হয়ে নাঙ্গলকোটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বিএনপির ওই কেন্দ্রীয় নেতা। ভুশ্চি বাজার পৌঁছেই মাগরিবের নামাজ শেষে স্থানীয় করিম মজুমদার মার্কেটে অবস্থিত মেজবান হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে বিকালের নাস্তা করছিলেন। এ সময়ে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারী লালমাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফরহাদ উদ্দিন ও যুবদল নেতা আবু হানিফের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন নেতাকর্মী ওই রেস্টুরেন্টে অতর্কিত হামলা চালায়। এই সময় তারা মোবাশ্বের ভূঁইয়ার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত গাড়ির গ্লাসগুলো ভেঙে ফেলে। সেই সঙ্গে করিম মজুমদার মার্কেট ও মেজবান হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনায় লালমাই থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- লালমাই উপজেলার পরতী গ্রামের মৃত মন্তাজ উদ্দিনের ছেলে মো. ফরহাদ উদ্দিন (৪৭), জামুয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে জাকির হোসেন (৪০), মাওলানা আব্দুল লতিফের ছেলে কাজী জাফর আহম্মদ রাজন (৩৭), মৃত আলী আশ্রাফ মিয়ার ছেলে কামাল হোসেন (৪৫), আমুয়া গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে আবু হানিফ (৩৩), আব্দুল বারিকের ছেলে ডা. জুবায়ের (২৭), সুলতান আহম্মদের ছেলে জয়নাল কাজী (৩৭), রহমতপুর চেঙ্গাহাটা গ্রামের ইসমাইল মিয়ার ছেলে আবুল হাশেমসহ (৫২) অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জন।
এ বিষয়ে লালমাই উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন মজুমদার বলেন, লালমাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে যারা এতদিন আওয়ামী লীগ করেছে, লোটাস কামালের কর্মী বাহিনী, সরোয়ার সাহেবের চিহ্নিত সন্ত্রাসী তারা এখন মনিরুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়। তারাই হোটেলটি ভাঙচুর করে, ফাঁকা গুলি চালায়, গাড়িটি ভাঙচুর করে হামলা করে। বর্তমানে তারা মনিরুল হক চৌধুরীর ব্যানারে বিএনপির হয়ে কাজ করছে। গত ৫ তারিখের আগে তারা আওয়ামী লীগের হয়ে বাস্তবায়নের কাজ করেছে, এখন বিএনপির পদ-পদবি নিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে।
হামলার ঘটনায় ওই কেন্দ্রীয় নেতার সফরসঙ্গী লালমাই উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জাবের আহমেদ (জাবেদ) জানান, ফ্যাসিস্ট সরকার আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী লোটাস কামালের সহচর সদর দক্ষিণ উপজেলার যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ। সে সবসময় সরকার দলের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে কাজ করে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম লোকমান বলেন, ফরহাদের নেতৃত্বে স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী এসে প্রথমে মেজবান হোটেলটি ভাঙচুর করে। পরে ভুশ্চি বাজার তদন্ত কেন্দ্রের সামনে রাখা মোবাশ্বের আলম ভুঁইয়ার গাড়িটি ভাঙচুর করে এবং গাড়িতে থাকা কিছু নগদ টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়।
লালমাই উপজেলা ছাত্রদল নেতা ও লালমাই উপজেলা কার্যক্রম বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্যসচিব বি.এই.এল হাবিব ফেসবুক স্ট্যাটাসে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, অতি উৎসাহী হওয়া ভালো না। যে বা যাহারা মোবাশ্বের ভুঁইয়ার গাড়িতে হামলা করছেন তারা অন্যায় করেছেন! এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে।
আল আমিন অয়ন নামের একটি ফেসবুক আইডির পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ফরহাদ ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তাও সবার জানা।
এ বিষয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভুঁইয়া বলেন, আমি একটি সামাজিক অনুষ্ঠান শেষ করে আসার পথিমধ্যে (ভুশ্চি বাজারে) আমার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে দেখা করে মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাই। নামাজ শেষ করে এসে দেখি স্থানীয় একটি হোটেল এবং আমার গাড়িটি ভাঙচুর অবস্থায় পড়ে আছে। এ সময় স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমাকে নিরাপদ করে সরিয়ে নেয়।
অভিযুক্ত ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি ঘটনাস্থলের পাশে মসজিদে নামাজ আদায় করে বের হয়ে হট্টগোলের আওয়াজ শুনি। এ সময় হঠাৎ বৃষ্টি আসে এবং বিদ্যুৎ চলে যায়। কিছু যুবক আসে তারা কেউই সক্রিয় কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। তারা মোবাশ্বেরের কাছে বিগত ১৭ বছরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কৈফিয়ত চায়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়। উভয়পক্ষের ধস্তাধস্তিতে মোবাশ্বেরের গাড়ি ও হোটেল ভাঙচুর হয়। এ সময় আমি দৌড়ে গিয়ে দুপক্ষকে সরিয়ে দেই। এছাড়া আমি এই হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।
লালমাই থানার ওসি শাহ আলম বলেন, এই ঘটায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।
মন্তব্য করুন