মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫, ০৭:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রামে ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনা, প্রস্তুতি শূন্যের কোঠায়

পুরোনো ছবি।
পুরোনো ছবি।

চট্টগ্রামে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। গত চার দিনে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নগরবাসীর মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হলেও সরকারি প্রস্তুতি অনেকটাই শূন্যের পর্যায়ে। নেই পরীক্ষা চালুর জন্য প্রয়োজনীয় কিট, অচল হয়ে আছে বিশেষায়িত হাসপাতালের বেশিরভাগ ভেন্টিলেটর। আর জনবল সংকট তো রয়েছেই।

এ অবস্থায় বুধবার (১১ জুন) জরুরি বৈঠকে বসেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও চিকিৎসক ডা. শাহাদাত হোসেন। বৈঠকে কিছু প্রাথমিক সিদ্ধান্ত এলেও বাস্তবায়ন বা মাঠপর্যায়ে কার্যকর প্রস্তুতি এখনো অনুপস্থিত।

তবে চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিন দুই একজন করে শনাক্ত হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সরকারিভাবে পরীক্ষা শুরু করা না গেলে আসল চিত্র বের হয়ে আসবে না। তাই অতিদ্রুত সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষা চালু করা আবশ্যক।

বিশেষায়িত দুই হাসপাতালই অপ্রস্তুত

বুধবার স্বাস্থ্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠকের পর চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতাল ও সিটি করপোরেশনের মেমন-২ হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল বলে ঘোষণা দেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তবে দুই হাসপাতালের একটিও করোনা চিকিৎসার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।

২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা আছে ১৮টি। এর মধ্যে কেবল ১টি আইসিইউ শয্যার ভেন্টিলেটর সচল রয়েছে। বর্তমানে আটটি শয্যায় রোগী ভর্তি করা। যেটতি ভেন্টিলেটর সচল রয়েছে সেটিও মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে পড়ে। অন্যগুলোর সঙ্গে কেবল অক্সিজেন সংযোগ থাকলেও জীবন রক্ষাকারী পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়ার মতো ব্যবস্থা নেই।

অন্যদিকে এই হাসপাতালে জনবল সংকট চরমে। বর্তমানে এই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের সংখ্যা থাকার কথা ১৭৭ জন (২০২৪ সালের কাঠামো অনুযায়ী)। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ৪২ জন। এর মধ্যে চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ ২০টি।

এ ২০ চিকিৎসকের মধ্যে ৭ জন সহকারী রেজিস্ট্রার, ৬ জন জরুরি বিভাগে, ৫ জন বহির্বিভাগে এবং একজন করে প্যাথলজি, ইউনানি, ডেন্টাল ও কারা বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। ২০২০ সালে করোনা ইউনিটের জন্য যে ২২ জন চিকিৎসক সংযুক্তি পেয়েছিলেন, তাদের সবাইকে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে বদলি করা হয়। এরপর আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

অপর ডেডিকেটেড হাসপাতালেরও একই অবস্থা। মেনন-২ হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা নেই। এখানে করোনার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ২০ টি শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি বয়স্ক, গর্ভবতী মহিলাদের টিকা পাওয়া সাপেক্ষে করোনার টিকা দেওয়া হবে।

জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আকরাম হোসেন জানান, আইসিইউ শয্যাগুলো মেরামতের জন্য অধিদপ্তর থেকে লোক আসবেন। পাশাপাশি আইসিইউ চালাতে নতুন করে জনবল প্রয়োজন। কারণ, আগের অনেকে এখন নেই। আর জনবল ও যন্ত্রপাতির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইমাম হোসেন কালবেলাকে বলেন, সিটি করপোরেশনের মেনন-২ হাসপাতালে করোনার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হবে। এখানে ২০টি শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে শয্যাগুলো প্রস্তুত হবে। পাশাপাশি এখানে আমরা কিট পেলে হাসপাতালে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করব। আমরা টিকার জন্য চাহিদা দিচ্ছি। করোনার টিকা পেলে বয়স্ক ও গর্ভবতীদের এখানে টিকা দেওয়া হবে।

কিট নেই, সরকারি পরীক্ষা বন্ধ

বুধবারের ওই সভায় চমেক হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরটিপিসিআর পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে কিট সংকটের কারণে কোনটিতেই পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেই। যদিও শিগগিরই কিট পৌঁছে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম কালবেলাকে বলেন, করোনা মোকাবিলায় নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সরকারি কিটের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আমাদের কিট আনার জন্য লোক পাঠাতে বলা হয়েছে। কিট আসার পর সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। আশা করি আমরা পর্যাপ্ত কিট পাবো।

‘আসল পরিস্থিতি ধরা পড়ছে না’—চিকিৎসকদের আশঙ্কা

গত চার দিনে চট্টগ্রামে ৬ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুজনের করোনা শনাক্ত হয়। এর আগে আরও চারজনের করোনা শনাক্ত হয়। করোনা আক্রান্ত ৬ জনের কেউই বিদেশ ফেরত নন। চিকিৎসকদের মতে, সরকারি পরীক্ষা না থাকায় প্রকৃত সংক্রমণ চিত্র উদঘাটন সম্ভব হচ্ছে না। বেসরকারি ল্যাবগুলোতে যেসব রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, তা মোট চিত্রের সামান্য অংশ মাত্র।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুর রব কালবেলাকে বলেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে পরীক্ষা কিট আগেরটির চেয়ে আলাদা হবে। আলাদা না হলে করোনা ধরা পড়বে না। যারা বেসরকারি ল্যাবে পরীক্ষা করছে, তাদের মধ্যে কিছু ধরা পড়ছে। গত চারদিনে ৬ জন শনাক্ত হলেও বাস্তবে করোনা রোগী আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতদিন চিকিৎসকরা করোনার পরীক্ষা ওভাবে করার পরামর্শ দিতেন না। সরকারিভাবে পরীক্ষা চালু হলে পরীক্ষার হার বাড়বে। কারণ, সবার বেসরকারিভাব পরীক্ষা করার সামর্থ্য নেই। আমরা মনে করি, ২০২০ সালের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সরকারিভাবে পরীক্ষা শুরু করা যাবে, ততই মঙ্গল হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরানে ঢুকে পড়ল ইসরায়েল, এখন?

রাত ১০টার মধ্যে ৬ জেলায় তীব্র বজ্রসহ ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা

মরিচ ক্ষেতে মিলল ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের’ গ্রেনেড

দেশবাসীকে জরুরি বার্তা দিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট

ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠকে যেসব আলোচনা

চলতি বছরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু আজ

যমুনায় গোসলে নেমে শিবির নেতার মৃত্যু 

ভারতে বিমান বিধ্বস্তের নেপথ্যে যেসব কারণ থাকতে পারে

বিশ্বজুড়ে দূতাবাস বন্ধ করছে ইসরায়েল

ইরানে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে বাংলাদেশের বিবৃতি

১০

‘বিমান দেখলেই আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন নিরাপদে পৌঁছে’

১১

সমগ্র বিশ্বকে অস্থির করে তুলেছে ইসরায়েল : এরদোয়ান

১২

বিদেশ যাচ্ছে ‘উৎসব’

১৩

বিধ্বস্ত বিমান থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরার গল্প জানালেন সেই যাত্রী

১৪

করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত বেড়েছে

১৫

বাসস্ট্যান্ডের আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৬

১৬

পারমাণবিক পদক্ষেপ নিয়ে যা জানাল ইরান

১৭

খেলনা পিস্তল নিয়ে দোকানিকে হুমকি, এলাকায় চাঞ্চল্য

১৮

জনস্বাস্থ্য শিক্ষাকে উপেক্ষা করে ভেক্টর বাহিত রোগ প্রতিরোধ অসম্ভব

১৯

গাজা-ইরান-ইউক্রেন সব যুদ্ধের দায় কি ট্রাম্পের?

২০
X