লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রসবকালীন গাফিলতির কারণে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের অভিযোগ, বারবার অনুরোধের পরও প্রসূতিকে রেফার না করে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। এ দিকে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
প্রাণ হারানো প্রসূতি পাটগ্রামের জোংড়া ইউনিয়নের নিরঞ্জন রায়ের স্ত্রী ঝর্ণা রানী (৩০)। তাদের ৮ বছরের এক কন্যাসন্তান এবং নবজাতক এক পুত্রসন্তান রয়েছে।
স্বজনদের অভিযোগ, গত ৮ জুন দুপুর ১২টার দিকে প্রসবজনিত কারণে ঝর্ণা রানীকে স্থানীয় জোংড়া মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বে থাকা আয়া রত্না রানী জানান, স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করানো হবে। প্রায় ২ ঘণ্টা পর পরিদর্শিকা চিনু বালা রায় এসে ঝর্ণার ব্যথা না থাকায় ইনজেকশন ও নানা ওষুধ প্রয়োগ করেন। পরে বিকেল ৫টার দিকে ঝর্ণা পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।
কিন্তু এরপর থেকেই তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। শুরু হয় অনবরত বমি ও রক্তক্ষরণ। প্রায় ৭ ঘণ্টা কেন্দ্রে রাখার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসক ঝর্ণার অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে তাকে রংপুরে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। রাত ৩ টার দিকে ঝর্ণাকে রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুদিন আইসিইউতে থাকার পর গত ১০ জুন তার মৃত্যু হয়।
নিহতের স্বামী নিরঞ্জন রায় বলেন, ‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি আমার দোকানের পাশেই। আমি বারবার অনুরোধ করেছি, সমস্যা হলে রেফার করেন; কিন্তু ওরা শুধু সময়ক্ষেপণ করেছে, ওষুধ আনতে বলেছে। রাত ১২টার দিকে বলল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে চিকিৎসক জানান, প্রসবের সময় ভেতরে ক্ষতি হয়েছে, রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায়নি। ৭ ব্যাগ রক্ত দিলেও স্ত্রীকে বাঁচাতে পারিনি। আমার দুটি সন্তান এখন মা হারা। এ ঘটনার তদন্ত হওয়া জরুরি।’
এ বিষয়ে জোংড়া মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আয়া রত্না রানী দাবি করেন, ঝর্ণার অবস্থা ভালো ছিল, স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসব হয়। কিছু শারীরিক সমস্যা থাকলেও তা আমাদের জানানো হয়নি।
জোংড়া মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা চিনু বালা রায় বলেন, উপজেলার চিকিৎসকের পরামর্শে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। জোর করে প্রসব করানো হয়নি, কোনো গাফিলতিও করা হয়নি।
ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করার কথা জানিয়ে পাটগ্রাম মেডিকেল অফিসার ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. খুরশিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। ছুটি শেষে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হবে। গাফিলতির প্রমাণ মিললে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন