নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৫, ১০:৪৯ এএম
আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ১১:০৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

চালের দামে হঠাৎ আগুন

নওগাঁর চালের বাজার। ছবি : কালবেলা
নওগাঁর চালের বাজার। ছবি : কালবেলা

নওগাঁয় হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভরা মৌসুমেও চালের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষের। তারা মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারলে চোখেমুখে অস্বস্তির ছাপ দেখা যাচ্ছে।

দেশের ধান-চাল উৎপাদনকারী অন্যতম এ জেলা নওগাঁয় এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ২ থেকে ৭ টাকা। পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালরে দাম বেড়েছে ২-৪ টাকা। আর পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। প্রতি কেজিতে প্রকারভেদে বেড়েছে ৫-৬ টাকা।

চালের হঠাৎ এভাবে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে একেকজন একেক মন্তব্য করছেন। কেউ বলছেন মিলারদের সিন্ডিকেট, কেউ বলছেন ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, আবার কেউ বলছেন সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রণ নেই বাজারে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। আবার এই সময়ে চালের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ক্ষোদ খুচরা ব্যাবসায়ীই মেনে নিতে পারছে না।

ভরা মৌসুমে মিলারদের সিন্ডিকেট এবং মজুতবিরোধী অভিযান না থাকায় চালের এমন আকস্মিক দাম বৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ করেই চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষের।

নওগাঁ শহরের আড়তদারপট্টির পাইকারি চাল বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে জিরাশাইল ৬৮-৭০ টাকা, কাটারি ৭০-৭২, শুভলতা ৬০-৬২ টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৬২-৬৪ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৫-৫৬ টাকা দরে বিক্রি করছেন মিল মালিক ও আড়তদাররা। এক সপ্তাহ আগে এই মোকামে জিরাশাইল ৬৪-৬৬ টাকা, কাটারি ৬৬-৬৮ টাকা, শুভলতা ৫৭-৫৮ টাকা, ব্রি আর-২৮ জাতের চাল ৫৯-৬০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ চাল ৫৩-৫৪ টাকা করে বিক্রি হয়েছিল।

অপরদিকে নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চালবাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে কেজি প্রতি ৫-৮ টাকা বেড়ে জিরাশাইল ৭০-৭২ টাকা, কাটারি ৭৫-৮০ টাকা, শুভলতা ৬২-৬৪ টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৬৫-৬৬ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এক সপ্তাহে আগে এই বাজারে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৬৫-৬৬ টাকা, কাটারি ৭০-৭২ টাকা, শুভলতা ৫৭-৫৮ টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৫৯-৬০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫২-৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। প্রকারভেদে ৩ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে চালের দাম।

পৌর ক্ষুদ্র চালবাজার সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন কালবেলাকে বলেন, বড় বড় বয়বসায়ীরা বেশি দাম দিয়ে ধান কিনছে। ছোট ব্যবসায়ীরা বড় বড় মিলারদের সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না। এটা পুরো একটা সিন্ডিকেট। বাংলাদেশে যে ধান আছে, তা দিয়ে একবছর চলে যাব।

তিনি আরও বলেন, আর বড় বড় ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার টন ধান কিনে মজুত করে রাখছে। আগে ৩- ৪টা অটোগাড়িতে চাল নিতাম। এখন ২০ বস্তা চাল পাচ্ছি না। কারণ আমাদের কাছে তো আর বড় বড় ব্যবসায়ীরা খুচরাভাবে চাল দেবে না। তাই আমাদের আমদানি কমে গেছে, আর ক্রেতা কিনছে কম পরিমাণে চাল। সরকারি নজরদারি না থাকার সুযোগে অতিরিক্ত মজুত করছে তারা।

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মেসার্স তাপস খাদ্য ভান্ডারের প্রোপাইটার তাপস কুমার মন্ডল বলেন, মিলাররা পর্যাপ্ত চাল দিচ্ছে না। ২০ বস্তার চাহিদা দিলে চাল দেয় ৫-৭ বস্তা। তার ওপর বস্তা প্রতি ২০০-৪০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যার কারণে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাল মানভেদে গত সপ্তাহের চেয়ে ৫-৬ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ভরা মৌসুমে বাজারে এভাবে চালের দাম বেশি হওয়া স্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। মিলারদের সিন্ডিকেট এবং মজুতের কারণেই চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

চালের আকস্মিক দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নওগাঁর আড়তদার পট্টির সততা রাইস এজেন্সির পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সুকুমার ব্রহ্ম বলেন, দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় সরকারের মজুত নীতিমালার তোয়াক্কা করছেন না অসাধু মজুতদাররা। এবার বোরো মৌসুমের শুরুতেই করপোরেট ব্যবসায়ীরা হাট-বাজারে আসা অর্ধেকের বেশি ধান কিনে মজুত করে রেখেছেন। কৃষকের ধান সাধারণ মিলারদের হাতে একেবারে নেই বললেই চলে। যার প্রভাবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম পাইকারি পর্যায়ে ২-৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার মোবাইল ফোনে কালবেলাকে বলেন, চালের দাম ২-৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ৬-৭ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ব্র্যান্ডিং কোম্পানির। তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। যার কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আমরা বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ চাই। এই জন্য আমাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর দৃশ্যমানভাব যেসব মিলে অতিরিক্ত মজুত আছে সেখানে অভিযান চালনো উচিত। বাজারে স্বস্তি ফেরাতে চাইলে ধান-চালের অবৈধ মজুতদারদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল মোবাইল ফোনে কালবেলাকে বলেন, চালের দাম কী কারণে বেড়েছে এই জন্য খাদ্য কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছি। তারা যেন প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে যদি অপরাধ মনে হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকা-১৩ আসনে ধানের শীষের সমর্থনে যুবদলের গণমিছিল

নতুন জোটের ঘোষণা দিল এনসিপি

কড়াইল বস্তিতে আগুন, তারেক রহমানের সমবেদনা

কড়াইল বস্তিতে আগুনের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার উদ্বেগ ও সমবেদনা 

গণভোট অধ্যাদেশ জারি করে গেজেট প্রকাশ

জেসিআই ঢাকা ইউনাইটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন মাসউদ

কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে

চীনা দূতাবাস কর্মকর্তার সঙ্গে চৌদ্দগ্রাম জামায়াত নেতাদের মতবিনিময়

নুরুদ্দিন আহম্মেদ অপুর সঙ্গে সেলফি তুলতে মুখিয়ে যুবসমাজ

অগ্রণী ব্যাংকের লকারে শেখ হাসিনার ৮৩২ ভরি স্বর্ণ

১০

শুভর বুকে ঐশী, প্রেম নাকি সিনেমার প্রচারণা?

১১

৭০৮ সরকারি কলেজকে চার ক্যাটাগরিতে ভাগ

১২

ইউএস বাংলার সাময়িকীর কনটেন্ট তৈরি করবে অ্যানেক্স কমিউনিকেশনস

১৩

সাদিয়া আয়মানের সমুদ্র বিলাশ

১৪

পৌরসভার পরিত্যক্ত ভবনে মিলল নারীর মরদেহ 

১৫

কড়াইলের আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ জানাল ফায়ার সার্ভিস

১৬

প্রশাসনের ৭ কর্মকর্তার পদোন্নতি

১৭

যুক্তরাষ্ট্রে যোগাযোগ ও মিডিয়া কনফারেন্সে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা

১৮

এবার জুবিনের মৃত্যু নিয়ে উত্তাল বিধানসভা

১৯

‘সুখবর’ পেলেন বিএনপির আরেক নেত্রী

২০
X