আকবর কবীর, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সুন্দরবনে যাচ্ছেন জেলেরা, বিদায় জানাতে নদীপাড়ে স্বজনদের ভিড়

জেলেদের বিদায় জানাতে নদীর পাড়ে স্বজনদের ভিড়। ছবি : কালবেলা
জেলেদের বিদায় জানাতে নদীর পাড়ে স্বজনদের ভিড়। ছবি : কালবেলা

প্রতীক্ষার প্রহর শেষ সকাল থেকেই জেলেরা সুন্দরবনে দলে দলে নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যাচ্ছেন। জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ, তারপরেও বেঁচে থাকার তাগিদে তাদের এই পেশা। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের খোলপেটুয়া ও চুনা নদীর পাড়ে জেলেদের বিদায় জানাতে এসেছেন স্বজনরা। তিন মাস বন্ধ থাকার পর শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষের পেশা সুন্দরবনে মাছ আহরণ করতে যাচ্ছেন পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের ১৫ সহস্রাধিক জেলে। স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দিনরাত মাছ ধরবেন তারা। তবে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় তারা মাছ শিকার করার সুযোগ পাবেন না।

সকাল থেকে সুন্দরবনের নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরার জন্য দলে দলে প্রবেশ করছেন জেলেরা। তাই সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার ঘরে ঘরে এখন ঈদ আনন্দ। তিন মাসের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন, স্বপ্ন বুনছেন তারা। সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরার জন্য নৌকা প্রস্তুত করে উপকূলীয় এলাকার জেলেরা এখন নতুন উদ্যমে মাছ ধরার কাজে নেমে পড়েছেন। মেরামত করা হয়েছে মাছ ধরার জাল। তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আজ সকাল ৭টা থেকে তারা জীবিকার সন্ধানে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন। তিন মাসের বেকারত্বের অবসান হওয়ায় জেলে, বাওয়ালি ও ট্রলারচালকদের মধ্যে খুশির আমেজ বিরাজ করছে।

পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা, জীবজন্তু ও মাছের প্রজনন বাড়ানোর জন্য ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে ৯২ দিনের জন্য নদ-নদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরা ও পর্যটক প্রবেশেরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আগামী ১ সেপ্টেম্বর সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে।

গত তিন মাস সংসার চালাতে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কলবাড়ি গ্রামের আসাদ গাজী বেসরকারি সংস্থা আর মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। এখন নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে মাছ ও কাঁকড়া ধরে ঋণ পরিশোধের আশা তার।

শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন দাতিনাখালী গ্রামের জেলে আবদুল হাকিম গাজী (৬৫)। তিনি ৫০ বছর ধরে সুন্দরবনে যাচ্ছেন। আগে বাবার সঙ্গে যেতেন। এখন অন্য সঙ্গীদের সঙ্গে যান। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল তার জীবন-জীবিকা। আবদুল হাকিম গাজী বলেন, এই তিন মাস সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষ বেকার থাকেন। তাদের জন্য কোনো সুবিধা দেওয়া হয় না। তিনি বেসরকারি সংস্থা ও মহাজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। ১ সেপ্টেম্বর থেকে মাছ ও কাঁকড়া ধরে এসব ঋণ পরিশোধ করবেন। ইতোমধ্যে নৌকা মেরামত ও রং করেছেন। জাল মেরামত করে এখন শুধু সুন্দরবনে ঢোকার জন্য অপেক্ষা। আগেভাগে সুন্দরবনে ঢুকতে পারলে মাছ বেশি পাওয়া যেতে পেরে, এ আশায় প্রথম দিনেই (১ সেপ্টেম্বর) তিনি সুন্দরবনে ঢুকে পড়েছেন। স্বজনরা দল বেধে এসেছেন নদীর পাড়ে তাকে বিদায় জানাতে।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, ১ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশন থেকে নৌকা নিবন্ধন (বিএলসি) হয়েছে ২ হাজার ৮৩৯টি। বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা নূরুল আলম জানান, সাধারণত একটি নৌকায় ৫-৬ জন করে মাছ কিংবা কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবনে ঢুকে থাকেন।

সুন্দরবন ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম জানান, পর্যটকের ওপর নির্ভর করে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় পাঁচ শতাধিক ট্রলার চলে। সুন্দরবনে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাছ ও কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখার পাশাপাশি পর্যটক ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় তাদের প্রায় দেড় হাজার ট্রলারচালক ও শ্রমিক বেকার জীবনযাপন করেন। তাদের সংসার চলে খুব কষ্টে ধারদেনা করে। তিনি জানান, সকাল থেকে ট্রলার চলাচল শুরু হয়েছে।

সুন্দরবন জেলে বাঁওয়ালি মৌয়াল সমিতির সভাপতি সুশান্ত মণ্ডল বলেন, বছরের প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস সুন্দরবনের মাছ ও কাঁকড়া ধরা বন্ধ থাকে। মৎস্য বিভাগ প্রতি বছর মাছের প্রজনন রক্ষায় ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখে। এই অবসরকালে সাগরে মাছ ধরা ওই জেলেদের জন্য মাথাপিছু ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের জন্য কোনো সুবিধা কিংবা বরাদ্দ নেই। তিনি এ সময় বেকার হয়ে পড়া জেলে ও বাঁওয়ালিদের জন্য বরাদ্দের দাবি জানান।

সুন্দরবনের ডালে ডালে এখন পাখির কলরব, জলে জলে বন্যপ্রাণীর অবাধ সাঁতারের জন্য মাছ, কাঁকড়া ধরা ও পর্যটক প্রবেশ বন্ধ করে দিলে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল সবার অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হয় বলে জানালেন সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার মানুষ।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, তিন মাস পর ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলে ও বাঁওয়ালিদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে মাছও কাঁকড়া শিকার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আগে থেকে জেলে বাঁওয়ালির পাশাপাশি পর্যটক পরিবহনকারী ট্রলার মালিকরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। সুন্দরবন সুরক্ষায় বন বিভাগ সব সময় প্রস্তুত আছে। মৎস্যজীবীদের সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ধরতে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। সব বনজীবীকে বনের আইন মেনে চলতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেবিন ক্রুদের আসল কাজ কী

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের বড় সুখবর দিল সরকার

জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে এবার আইপিএলে কাজ করা অ্যানালিস্ট

আমরা লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে : নেতানিয়াহু

৩ প্যাকেট কাঁচা নুডলস খেয়ে ১৩ বছরের কিশোরের করুণ পরিণতি

তিস্তার বন্যায় কৃষকের স্বপ্ন ভাসছে অনিশ্চয়তার অথৈ জলে

ব্যাংকিং টিপস / ব্যাংকের সুদের হার ও চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকুন

শতভাগ লুটপাটমুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী : ড. মোবারক

মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে এসে মারা গেলেন ছেলেও

১০

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

১১

সিঙ্গারে চাকরির সুযোগ, দ্রুত আবেদন করুন

১২

মেসিহীন মায়ামিকে বাঁচাল রদ্রিগেজের দুর্দান্ত গোল

১৩

গাজায় যেভাবে দুর্ভিক্ষ নেমে এলো

১৪

লেভান্তের মাঠে বার্সার রোমাঞ্চকর জয়

১৫

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

১৬

আকিজ গ্রুপে চাকরি, বেতন ছাড়াও থাকবে নানা সুবিধা 

১৭

বাগেরহাটে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

১৮

যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করছে ভারত

১৯

২৪ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২০
X