শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় নৌপথে দিনে ও রাতে মিলিয়ে মোট দুটি ফেরি চলাচল করছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। ওই সড়কটির দুটি স্থানে সংস্কার কাজ করার কারণে গত ১৫ আগস্ট থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকেল শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নরসিংহপুর ফেরি ঘাটে দেখা যায়, এই চিত্র।
ঘাটের পল্টুনে ৩টি ফেরি নোঙর করে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সর্বশেষ দুপুর ১২টার দিকে যাত্রীবাহী একটি বাস, দুটি মাইক্রোবাস ও তিন টন ওজনের একটি ট্রাক নিয়ে ফেরি কিশোরী চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। আরিফুল ইসলাম নামে এক যাত্রী এসেছেন খুলনা থেকে। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিয়ে যাবেন চট্টগ্রাম। কালবেলাকে তিনি বলেন, পরিবারবর্গ নিয়ে বসে আছি। অনেক অসুবিধা হচ্ছে। কখন ফেরি আসবে, কখন ফেরি ছাড়বে কিছুই বুঝতেছি না।
এ বিষয়ে কথা হয় বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, গোপালগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে চলাচলকারী একাধিক পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের সঙ্গে। রিয়াদ আহমেদ নামে এক এক ট্রাকচালক জানান, আমরা পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে যাতায়াত করি। বেশ কয়েক দিন ধরে এই সড়কে আমরা চলাচল করতে পারছি না। এখন আমাদের পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। তাতে আমাদের খরচসহ ভোগান্তি বেশি হচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় পণ্যে পচন ধরে যায়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) নরসিংহপুর ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, পণ্যবাহী ট্রাক না আসার কারণে দিন ও রাতে মোট দুটি ফেরি চলাচল করে। দুপুর ১২টার দিকে একটি ফেরি ছেড়ে গেছে। ঘাটে কোনো গাড়ি নেই। পরে ফেরি রাত ১১টার দিকে ছেড়ে যাবে। মাঝে মধ্যে দুই একটি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস আসলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। গাড়ি কম হওয়ার কারণে আমরা লোকসানে পড়েছি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ও শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বিভিন্ন যানবাহন চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলাচল করে। এ ছাড়া পায়রা বন্দর, মোংলা বন্দর, ভোমরা স্থল বন্দর ও বেনাপোল স্থল বন্দেরর আমদানি-রপ্তানির পণ্য নিয়ে ট্রাকগুলো এ পথ দিয়ে নৌপথের ফেরি পারাপার হয়ে চলাচল করে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আগে শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথে সাতটি ফেরি দিয়ে প্রতিদিন ৪৫০ হতে ৫০০টি যানবাহন পারাপার করা হতো। সড়ক পথে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় ঘাটে তেমন গাড়ি আসে না। বর্তমানে সরকটি দিয়ে যাত্রীবাহী বাস, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের মাছ ব্যবসায়ীদের ছোট পিকআপ চলাচল করছে। গাড়ি কমে যাওয়ায় বিআইডব্লিউটিসি ফেরির সংখ্যা কমিয়ে দুটি করে দিয়েছে। বর্তমানে ভেদরগঞ্জের নরসিংহপুর ফেরি ঘাট থেকে দিন রাতে দুবার ও চাঁদপুরের হরিণা ঘাট থেকে দিন রাতে দুবার ফেরি পারাপার অব্যাহত রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও মাছ ব্যবসায়ীরা।
শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়কটি ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য। ওই সড়কে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে চারলেন সড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চার লেন প্রকল্পের বাইরে থাকায় সড়কের শরীয়তপুর সদর উপজেলার বুড়িরহাট বাজারের ৩০০ মিটার অংশ ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরের ৭০০ মিটার অংশ সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই দুটি স্থানে এক কিলোমিটার সড়ক আরসিসি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই অংশের নির্মাণকাজ চলার সময় কোনো যানবাহন চলাচল করলে তাতে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। এ কারণে সওজ বুড়িরহাট থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার অংশে যানবাহন চলাচল ৬ আগস্ট হতে বন্ধ করে দেয়। তখন বিকল্প হিসেবে যানবহনগুলো বুড়িরহাট-ডামুড্যা ও ডামুড্যা- নারায়ণপুর সড়ক ব্যবহার করে পুনরায় ওই সড়কে উঠে চলাচল করছিল। ভারি যানবাহন চললে উপজেলা সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে এলজিইডি সড়কটি দিয়ে ট্রাক চলাচলে আপত্তি জানায়। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গত ১৪ আগস্ট আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় সংস্কার কাজ চলাকালীন সময়ে ১৫ আগস্ট হতে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাস শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কে সকল ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে হালকা গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস বিকল্প এলজিইডির সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারবে।
শরীয়তপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের দুইটি স্থানে সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। এ কারণে সেখানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হালকা যানবাহন চালকরা বিকল্প একটি এলজিইডির সড়ক ব্যবহার করতে পারবেন।
মন্তব্য করুন