খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে আজও উত্তাল নগরী। আলোচিত এসআই শুকান্ত দাশকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় তৃতীয় দিনের মতো কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের একাংশ উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার (২৮ জুন) কেএমপি কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনের সড়ক ও সোনাডাঙা বাসস্ট্যান্ড মোড় অবরোধ করে রাখে তারা। ফলে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। এসময় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এর আগে শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে কেএমপি ব্লকেড কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের খুলনা মহানগরের সদস্যসচিব জহুরুল তানভীর। এর আগে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজের ফেসবুক পেইজে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক ও খুলনা জেলা শাখার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি।
এসময় আন্দোলনকারীরা, কমিশনার জুলফিকার-এবার হবে চৌকিদার, লেগেছেরে লেগেছে-রক্তে আগুন লেগেছে, জুলফিকারের পদত্যাগ চাই, এবার হবে চৌকিদার-কমিশনার জুলফিকার, আমার ভাই কবরে-খুনি কেন বাহিরে, জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও-পুলিশ লীগের আস্তানা। দিল্লি না ঢাকা-ঢাকা ঢাকা, আর কোনো দাবি নাই-জুলফিকারের পদত্যাগ চাই। দালালি না রাজ পথ, রাজপথ-রাজপথ বলে মিছিল দেয়।
এদিকে, পুলিশ কমিশনারের অপসারণের দাবিতে নগরীতে সরব অবস্থানে বিএনপি। আজও কেএমপি সদর দপ্তর নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। আজ ও তারা কেএমপি সদর দপ্তরের মূল ফটকের সামনের সড়ক আটকে বিক্ষোভ শুরু করে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা জহুরুল তানভীর বলেন, খুলনার পুলিশ কমিশনার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তিনি খুলনায় আসার পর থেকে এখানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যদি আজকের মধ্যে জুলফিকারকে অপসারণ না করা হয় তাহলে আজ থেকে আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীনে যতগুলো অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আছে ডিসি সাউথ ডিসি নর্থসহ ৮টি থানায় তালা মেরে দেওয়া হবে।
এবিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, খুলনা শহর একটা আতঙ্কের ও সন্ত্রাসের নগরীতে পরিণত হয়েছে। খুলনা শান্তির নগরী, আমরা চাই না এখানে কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হোক। আমরা চাই এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান মুসলমান সবাই সমানভাবে নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করি। একটি পুলিশ কমিশনারের ভবনে যখন তালা লাগিয়ে দেওয়া হয় তখন বুঝতে হবে ওই শহরে পুলিশ আর কোনো ফাংশনাল পর্যায়ে থাকে না। সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে যায় এবং এটা বাড়তে থাকলে পুরো দেশেই পুলিশ অকার্যকর হয়ে যাবে। একটি শহরের প্রধান কর্তা ব্যক্তি হচ্ছে পুলিশ কমিশনার, তার অফিসে যদি তালা মারা হয় তাহলে ওসি পর্যায়ের একজন পুলিশ সদস্য কীভাবে কাজ করবে? জনগণ তখন তাকে আর মানবে না। যদি এই না মানার পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে আর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলে কিছুই থাকবে না। তাই সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বসে এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে বিএনপির নেতারা বলছেন, জুলাই পরবর্তী সময়ে খুলনা পুলিশ কমিশনার খুলনার চিহ্নিত ডেভিলদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। সন্ত্রাসীদের পদচারণায় খুলনা নগরী এখন প্রকোম্পিত। হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভাগীয় শহর খুলনার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এ ধরনের ব্যর্থ কর্মকর্তা দিয়ে মোটেই সম্ভব নয়। তিনি পতিত সরকারের পক্ষ অবলম্বন করেছেন। তাই বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেলে মহানগরীর ইস্টার্নগেট এলাকা থেকে সুকান্তকে খানজাহান আলী থানা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে তাকে আর কোনো থানায় পাওয়া যায়নি। অভিযোগ উঠেছে সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর পর বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) পুলিশ সদর দপ্তর, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের একটি যৌথ দল চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তারসংক্রান্ত বিধি-বিধান অনুসরণ করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে কেএমপির বিবৃতিতে জানানো হয়।
কেএমপি সূত্রে জানা গেছে, এসআই সুকান্ত দীর্ঘদিন সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালে তাকে খুলনা সদর থানায় বদলি করা হয়। গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথমে তাকে ঢাকায় ও পরে চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা হয়। একটি মামলার সাক্ষ্য দিতে মঙ্গলবার তিনি খুলনায় আসেন। সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে তাকে মারধর করা হয়।
মন্তব্য করুন