চট্টগ্রামে মশাবাহিত রোগের চিত্র কিছুটা বদলে গেছে। এবার ডেঙ্গুর পাশাপাশি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে চিকুনগুনিয়াও। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, শহরে ডেঙ্গুর চেয়ে বেশি রোগী মিলছে চিকুনগুনিয়ার। আবার অনেকে একসঙ্গে দুই রোগেই আক্রান্ত হচ্ছেন। এ অবস্থার পেছনে বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে এডিস মশার লাগামহীন বিস্তার ও এর প্রজননক্ষেত্রের ভয়াবহ বৃদ্ধি।
চলতি জুলাই মাসে প্রকাশিত রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) জরিপ বলছে, চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বা ব্রুটো ইনডেক্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। গত বছর এই হার ছিল ৩৬ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০ শতাংশের বেশি হলেই সে এলাকাকে মশাবাহিত রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। চট্টগ্রামের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে উঠে এসেছে আগ্রাবাদ, যেখানে এই সূচক ১৩৪ শতাংশ পর্যন্ত ছুঁয়েছে।
বাসাবাড়িতেও বাড়ছে মশার ঘনত্ব
এবার শুধু ড্রেন, জলাধার বা ফাঁকা প্লট নয়- বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। আইইডিসিআরের জরিপে দেখা গেছে, ১২৮টি বাড়ির মধ্যে ৬২টিতে পাওয়া গেছে এডিস মশার লার্ভা, যা শতকরা হিসেবে ৪৮ শতাংশেরও বেশি। গত বছর ২০০টি বাড়ির মধ্যে ৭৪টিতে লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুর রব কালবেলাকে বলেন, ‘চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ এবার বেশি। আমরা ডেঙ্গুর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ চিকুনগুনিয়ার রোগী পাচ্ছি। চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুর হার কম হলেও শরীরের দুর্বলতা বিভিন্ন জয়েন্টে তীব্র ব্যথা থাকে। এই ব্যথা বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
মৃত্যু ডেঙ্গুতে হলেও চিকুনগুনিয়া ছড়াচ্ছে বেশি
চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮২৭ জন এবং চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮০৩ জন। তবে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার বেশি- এ পর্যন্ত অন্তত ৮ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে ৬ জনই মারা গেছেন জুলাই মাসে। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর পাশাপাশি জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীও শনাক্ত হয়েছে তিনজন। এ ছাড়া করোনায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২২৫ জন।
জরিপে তিন সুপারিশ
আইইডিসিআরের সাম্প্রতিক জরিপে তিনটি সুপারিশ দেওয়া হয়, যার একটি হলো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে ধারাবাহিকভাবে মশক নিধন অভিযান পরিচালনা। আগের বছর সিভিল সার্জন কার্যালয় আট দফা সুপারিশ দিয়েছিল, যার মধ্যে দিনে দুবার ফগিংয়ের নির্দেশনাও ছিল। বাকি দুটি হলো- জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা জোরদার করা এবং নির্মাণাধীন ভবন ও বাসাবাড়িতে নিয়মিত পরিদর্শন এবং আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম কালবেলাকে বলেন, ‘গবেষণায় যে লক্ষণগুলো উঠে এসেছে, সেগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা পর্যায়ে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আমাদের যে জনবল আছে, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা আরও ভালো করে দিতে পারে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম বলেন, “এখন আমরা ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চালাচ্ছি। যেসব এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেসব জায়গায় অতিরিক্ত ফগিং এবং লার্ভা ধ্বংসের কাজ চলছে। নতুন জরিপ অনুযায়ী কার্যক্রম হালনাগাদ করা হচ্ছে।”
মন্তব্য করুন