ঝিনাইদহের মহেশপুরের চাপাতলা গ্রামে বিয়ে হওয়ার কারণে বিদ্যালয়ে ক্লাস করতে না পারা সে শিক্ষার্থী রিনা আক্তার মনিরা ক্লাসে ফিরেছে। এতে খুশি তার সহপাঠী ও পরিবার।
বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে স্বরুপপুর-কুসুমপুর মাধ্যমিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করেন ওই শিক্ষার্থী।
মনিরা জানান, আমি আজকে ক্লাস করেছি। আমার খুব ভালো লাগছে। স্যাররা আমাকে বলেছেন- খুব ভালো করে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে। যারা আমাকে স্কুলে ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
শিক্ষার্থীর বান্ধবী শিউলি খাতুন বলেন, খুব খারাপ লেগেছিল যখন আমাদের বান্ধবী মনিরাকে ক্লাস করতে দেয়নি হেড স্যার। আজকে সে আমাদের সঙ্গে ক্লাস করেছে। খুব ভালো লাগছে আমাদের। বিবাহিত হলেও তো সে আমাদের বান্ধবী। আমরা একসঙ্গে এতদিন পড়ছি।
তার মা আফরোজা খাতুন বলেন, আমার মেয়েকে স্কুলে যেতে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। সে আজকে ক্লাস করেছে। সবার চেষ্টায় আজকে আমার মেয়ে স্কুলে ক্লাসে ফিরেছে। আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক।
মহেশপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীনেশ চন্দ্র পাল বলেন, আমি প্রধান শিক্ষককে বলে দিয়েছি। ওই শিক্ষার্থী ক্লাস করছে।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থী মনিরাকে ক্লাস করতে না দেওয়ার বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলে দিয়েছি। ওই শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকসহ সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঝিনাইদহের মহেশপুরে বিয়ে করার অপরাধে অভিযুক্ত করে নারী শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে দেননি প্রধান শিক্ষক। ঝিনাইদহের মহেশপুরের ভারত সীমান্তবর্তী স্বরুপপুর-কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্রী রিনা আক্তার মনিরা। তাদের বাড়ি পার্শ্ববর্তী চাপাতলা গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই ছিল পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ। লেখাপড়া শেষ করে হতে চেয়েছিল পুলিশ অফিসার।
কিন্তু বাবার মৃত্যু আর সংসারে আর্থিক অনটন কিশোরীর সেই স্বপ্নকে ফিকে করে দেয়। গত তিন বছর আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণে কৃষক বাবা মনিরুল ইসলামের মৃত্যুর পর দরিদ্র এই পরিবারটিতে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। সাংসারিক অভাব, অনটন আর শতকষ্ট সহ্য করেও মা আফরোজা খাতুন স্বামীর রেখে যাওয়া কয়েকটি গরু পালন করে, দেড় বিঘা জমি চাষ ও আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায় ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া বড় মেয়ে রিনা আক্তার মনিরা ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট মেয়ে আনিকার লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছিলেন।
সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে মেয়েটির নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ও দারিদ্রতার কারণে মা সিদ্ধান্ত নেন বিয়ের পর মেয়েটিকে লেখাপড়া শেখাবেন। এরই প্রেক্ষিতে তিন মাস আগে পার্শ্ববর্তী শ্যামকুড় গ্রামে বিয়ে দেন রিনাকে।
বিয়ের তিন মাস পর বাবার বাড়িতে এসে চলতি মাসের ২০ তারিখ মা আফরোজা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যায় রিনা। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান তাকে জানিয়ে দেন বিবাহিত মেয়েদের কোনো ক্লাস করতে দেওয়া যাবে না। বারবার অনুরোধ করলেও কর্ণপাত করেননি শিক্ষক। পরবর্তীতে ক্লাস রুমে সহপাঠীদের সঙ্গে বসলেও ওই প্রধান শিক্ষক ক্লাসে গিয়ে নাম ধরে ডেকে ডেকে বলেন- বললাম চলে যেতে, এখনও বসে আছো কেন। এরপর শিক্ষার্থী ও তার মাকে বের করে দেন স্কুল থেকে। এরপর ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে লিখিতভাবে বিষয়টি জানান।
মন্তব্য করুন