

কৃষ্ণসাগরে জাহাজে হামলা বাড়তে থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। তুর্কি মালিকানাধীন জাহাজও এসব হামলার শিকার হওয়ায় সমুদ্রপথের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে মনে করছে আঙ্কারা। এই পরিস্থিতিতে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি নতুন কিন্তু সীমিত চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে জ্বালানি অবকাঠামো ও জাহাজে হামলা বন্ধ করা যায়।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ডেইলি সাবাহর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরে রুশ বাহিনীর হামলায় একটি তুর্কি মালিকানাধীন কার্গো জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাহাজটির অপারেটরের বরাতে জানা গেছে, চর্নোমোর্স্ক বন্দরে সন্দেহভাজন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।
এ ছাড়া গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত তিনটি জাহাজ কৃষ্ণসাগরে হামলার শিকার হয়েছে। এসব হামলার কিছু ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে, যারা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ব্যবহৃত রাশিয়ার তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’ তেলবাহী ট্যাংকারগুলোকে লক্ষ্য করছে।
শনিবার রাতে তুর্কি টেলিভিশন চ্যানেল টিভিনেটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফিদান বলেন, তুরস্ক শুরু থেকেই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করে আসছিল। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সবাই চাপ বাড়াচ্ছে এবং সব দিকেই হামলা চালানো হচ্ছে।
ফিদান জানান, উভয় পক্ষই জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে, যার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় কৃষ্ণসাগরের বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। তুর্কি কোম্পানির মালিকানাধীন কিন্তু বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এবং তুর্কি নাবিকরা গুরুতর ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো তুর্কি নাগরিক হতাহত না হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সম্প্রতি তুর্কমেনিস্তানে এক বৈঠকের ফাঁকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বিষয়টি সরাসরি তুলেছেন। তিনি বলেন, যদি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি বা শান্তি চুক্তি সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত জ্বালানি অবকাঠামো ও কৃষ্ণসাগরের সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি সীমিত চুক্তি হওয়া দরকার।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, এর আগের ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ কার্যকর থাকাকালে কৃষ্ণসাগরে বাণিজ্য প্রায় নির্বিঘ্ন ছিল এবং জাহাজে হামলা হয়নি। এখন আমাদের আবার সেই ধরনের হামলা স্থগিতের ব্যবস্থা দরকার।
২০২২ সালে জাতিসংঘের সহায়তায় তুরস্ক মধ্যস্থতা করে এই শস্যচুক্তি করলেও পরে রাশিয়া তা নবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর থেকে ইউক্রেনের কৃষি ও বন্দর অবকাঠামোতে হামলা জোরদার হয়।
এদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি খুব দূরে নয়। তিনি কৃষ্ণসাগরকে সংঘাতের ক্ষেত্র না বানানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিরাপদ নৌ চলাচল রাশিয়া ও ইউক্রেন—দু’পক্ষেরই প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন