কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কোথাও কোথাও তলিয়ে যাচ্ছে আধাপাকা আউশ ধান। যার ফলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ফসল হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, এ উপজেলাটি ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানি অনায়াসেই প্রবেশ করে এ উপজেলায়। যার ফলে কিছুদিন ধরে হতে থাকা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আকস্মিক জলাবদ্ধতার কারণে ডুবতে বসেছে আধাপাকা ধানের জমি। যার ফলে নিচু এলাকাগুলোর ফসলি মাঠে আধাপাকা আউশ ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আউশ ধান আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ১৪৮ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও গত বছরের বন্যার কারণে জমিতে জমা পলির কারণে এ বছর আউশ ধান ভালো হয়েছে। তবে বৃষ্টি ও উজানের পানিতে নিম্নাঞ্চলের মাঠগুলোর ফসল ক্ষতির মুখে পড়ছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উজানের ঢল ও বৃষ্টির ফলে এ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত ঘুঙুর ও শালদা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে এসব নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধান্যদৌল, নন্দীপাড়া, নাইঘর এলাকা, শশীদল ইউনিয়নের বাগড়া, নাগাইশ, ছোট নাগাইশ, দেউশ, সাজঘর, চৌব্বাস এলাকা ও চান্দলা ইউনিয়নের চারাধারি, হুরারপাড়সহ বেশ কিছু এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথাও কোথাও তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। না পাকায় কৃষকরা আউশ ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। যার ফলে কৃষকরা ফসল হারানোর ভয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের নন্দীপাড়া এলাকার কৃষক শাহজালাল বলেন, দিন দিন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের আধাপাকা আউশ ধান প্রায় ডুবতে বসেছে। গত বছরও শালদা নদী ও গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যায় আমাদের আধাপাকা ও পাকা ধান নষ্ট হয়েছিল। ধারদেনা করে এবার আউশ আবাদ করেছিলাম। এবারও পানিতে ডুবে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হলে পথে বসা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।
উপজেলার নাগাইশ এলাকার কৃষক ইব্রাহিম খলিল বলেন, বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে আমাদের খালবিলে ও ফসলি মাঠে পানি বাড়ছে। সবেমাত্র আউশ ধানে ধোর বের হচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেতে আধাপাকা ধান। এ সময় ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। গত বছরের মতো এবারও ফসল নষ্ট হয়ে গেলে ক্ষতির মুখ থেকে আমরা আর উঠে দাঁড়াতে পারব না।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি জমে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ফসলি মাঠে আধাপাকা ধান হুমকির মুখে পড়েছে। তবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল করতে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি বিভাগ একযোগে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও পানি কমতে শুরু করেছে। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে কাটার উপযোগী ধান দ্রুত কেটে ফেলার জন্য। আশা করছি ফসলের বড় কোনো ক্ষতি হবে না।
মন্তব্য করুন