যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যশোরে সেদিন ছিল বিজয় ও বিষাদের প্রতিচ্ছবি

আগুনে পুড়ে যাওয়া যশোরের জাবের ইন্টারন্যাশনাল হোটেল। ছবি : সংগৃহীত
আগুনে পুড়ে যাওয়া যশোরের জাবের ইন্টারন্যাশনাল হোটেল। ছবি : সংগৃহীত

আজ ৫ আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন, যা ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি। এই দিনে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছিল; কিন্তু যশোর শহরে বিজয় ও বিষাদের এক মিশ্র চিত্র ফুটে উঠেছিল।

একদিকে যেমন ছিল শেখ হাসিনার সরকারের পতনের উল্লাস, অন্যদিকে তেমনি একদল দুষ্কৃতকারীর হাতে পুড়ে গিয়েছিল হোটেল জাবির, যা জন্ম দিয়েছিল এক মর্মান্তিক অধ্যায়ের। এই দিনে যশোরের জনগণ বিজয় মিছিল আর স্লোগানে রাজপথ কাঁপিয়ে তুলেছিল।

প্রতিদিনের মতো ৫ আগস্ট কাকডাকা ভোরে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ প্রশাসন এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের রক্ত চক্ষু এবং প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসেন। শহরের বিভিন্ন সড়কে মিছিল শেষে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সিভিল কোর্ট মোড়ে অবস্থান নেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন অর্থাৎ চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানেই হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে অবস্থান করেন। এরপর বেলা ৩টায় চূড়ান্ত বিজয়ের সংবাদ আসার সঙ্গে সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিজয় মিছিল সহকারে দড়াটানা ভৈরব চত্বরে যান। সেখানে তিনি জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বীর জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন।

এরপর তিনি প্রশাসনিক শূন্য যশোর শহরসহ জেলাজুড়ে সাধারণ মানুষের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় উপসনালয়, সরকারি স্থাপন রক্ষার কাজে নেমে পড়েন। তিনি নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় সাধারণ মানুষের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, সরকারি স্থাপনা সবখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে নেমে পড়েন। সেদিন অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে প্রশাসনিক শূন্যতার মাঝে পুরো যশোর জেলার মানুষের জানমাল রক্ষা পেয়েছিল। বিশেষ করে সনাতন ধর্মের মানুষের বাড়িঘর ব্যবসা, প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপসনালয় সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়ে।

এদিকে ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর গোটা যশোর শহর যখন বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে ঠিক তখনই বিষাদের কালো ছায়া নেমে আসে। ফ্যাসিস্টের দোসর কার্যক্রম নিষিদ্ধ যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন শহরের চিত্রা মোড়ে হোটেল জাবের ইন্টারন্যাশনাল একদল সুযোগসন্ধানী দুষ্কৃতকারী ভাঙচুর করে ও অগ্নিসংযোগ করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত দলীয় নেতাকর্মী, ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত সেটিকে রক্ষার করতে নেমে পড়েন।

ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহতরা হলেন—যশোর চাঁচড়া রায়পাড়ার মো. সেলিম সরকারের আব্দুল আজিজ চাঁন (১৬), সদর উপজেলার শাখারিগাতী গ্রামের শহিদুল খানের ছেলে সিফাত হোসেন (২২), কিসমত নোয়পাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন লাল্টুর ছেলে সোহানুর রহমান শিহাব (২৬), শহরের বারান্দি মোল্লাপাড়ার আমতলার আব্দুল খালেকের ছেলে হাফিজ উদ্দিন (৩০), বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে রোকনুজ্জামান রাকিব (২২), উপশহর ১৬/ ১ বি ব্লক এলাকার সৈয়দ শাহিন ফরহাদের ছেলে সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ (২৭), পুরাতন কসবা রায়পাড়ার এম এম কবির হাসেনের ছেলে ফয়সাল হোসেন (২৫), মুজিব সড়কের হোমিও চিকিৎসক শাকিল ওয়াহিদের ছেলে শাওয়ানাত মেহতাব প্রিয় (১৮), কৃষ্ণবাটি গ্রামের রুস্তম আলী ছেলে মেহেদী হাসান (১৩), পূর্ব বারান্দি মোল্লাপাড়া আমতলার শেখ মতিয়ার রহমান ডাবলুর ছেলে সামিউর রহমান সাদ (১৭), খড়কি কারবালা বামন তলার মকসেদুর রহমান রাসেলের ছেলে রুহান ইসলাম (১৭), রূপদিয়া বলরামপুর গ্রামের ওলিযার রহমানের ছেলে তারেক রহমান (২৮), সুজলপুর হঠাৎপাড়ার মো. আলমগীর হোসেনের ছেলে আলামিন বিশ্বাস (২০), ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের আশিকুর রহমানের ছেলে আবরার মাসমুন নীল (১০), চাঁচড়া চোরমারা দিঘীরপাড় এলাকার মানিক হোসেন ড্রাইভারের ছেলে ইউসুফ আলী (১৫), একই এলাকার রেলগেট তেতুলতলার বাস ড্রাইভার হারুন অর রশীদের ছেলে মেহেদী হাসান আলিফ (১৫), চাঁচড়া ডালমিল এলাকার মো. শাহিদুর রহমানের ছেলে সাকিবুল হাসান মাহি (১৫), ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের শহিদুল হকের ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে শহীদ (২৬), আমদাবাদ আলম নগর গ্রামের মো. কুদ্দুস আলী ছেলে রাসেল রানা (২১), শংকরপুর এলাকার আলাল উদ্দিনের ছেলে সাকি (১৮), চাঁচড়া রায়পাড়া নিউ রামকৃষ্ণ রোডের কাবিল শেখের ছেলে রিয়াদ শেখ (১৮), চাঁচড়া রায়পাড়ার আরবিকে রোড এলাকার মোতালেব মিয়ার ছেলে খালিদ হোসেন শান্ত (১৮) ও শার্শা উপজেলার বড় আঁচড়া গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুল্লাহ (২৪)।

অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে মিষ্টিমুখ করেন।

এদিকে ৪ আগস্ট বিকেলে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে ফ্যাসিস্টের দোসর কথিত সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের নেতৃত্বাধীন মিছিল থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অগ্নিসংযোগ করে। দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে থাকা মহান স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ রাষ্ট্রপতি বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, আসবাবপত্র, মূল্যবান কাগজপত্র পুড়ে যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজীপুরে পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ড

মুখ অতিরিক্ত ঘামে কেন, যা বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

ফাইনালে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত ভারতের, দেখে নিন দু’দলের একাদশ

মালদ্বীপে নেপালি নারীকে ছুরিকাঘাত, বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

দলীয় লোগো পরিবর্তন করছে জামায়াত!

খাগড়াছড়িতে ৩ জন নিহত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর বার্তা

শরিয়াহ কমিটির সদস্যদের মাসিক বেতন ২৫ হাজার টাকা

চার বছর পর নতুন নেতৃত্বে চমেক ছাত্রদল

২৩ বছরে ফাইনারী অ্যাডভারটাইজিং

জাবি সংলগ্ন মহাসড়কের পাশ থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

১০

পাঠ্যপুস্তকে জুবিন গার্গের জীবনী

১১

আরও ২৫০ সনাতনীর বিএনপিতে যোগদান

১২

দেখে নিন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচের সময়সূচি

১৩

আমার স্ত্রীই ঠিক করেন কখন হামলা চালানো হবে : নেতানিয়াহু

১৪

সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারের ছেলে শাহেদ রিমান্ডে

১৫

কাঠগড়ায় দুর্জয়কে দেখে কাঁদলেন স্ত্রী, চুমু খেলেন বোন

১৬

হজে কমেছে বিমান ভাড়া, বেড়েছে স্বাস্থ্যবিমা

১৭

আরও এক ভারতীয় ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে পিসিবির অভিযোগ

১৮

বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে তথ্য উপদেষ্টার অভিযোগ

১৯

পূজা উপলক্ষে ১০ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে জবি

২০
X