ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সামন্তা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক আব্দুল জলিল। চার দশক ধরে একই জমিতে ধান আর নানা ফসল ফলিয়ে সংসার চালিয়ে আসছেন তিনি। কিন্তু গত দুই বছর ধরে সেই জমিতে ধান নয়, জমছে শুধু পানি। চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার একমাত্র আয়ের উৎস। এই জমি ছাড়া তার আর কোনো উপার্জনের পথ নেই। তাই স্থায়ী জলাবদ্ধতার কাছে হার মেনেছেন জলিল মিয়া।
শুধু জলিল মিয়া নন, একই দুর্দশায় পড়েছেন সামন্তা গ্রামের শতাধিক কৃষক। অভিযোগ, গ্রামের পাশের খালের মুখে বাঁধ দিয়ে মাছের খামার বানিয়েছেন কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় জমির পানি বের হওয়ার কোনো পথ নেই। বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। ফলে ডুবে গেছে সবজি ক্ষেত, আমনের বীজতলা আর সদ্য রোপণ করা ধান।
স্থানীয় কৃষক লাল্টু মিয়া জানান, এমন পরিস্থিতিতে তাদের সামনে বেঁচে থাকার লড়াই আরও কঠিন হয়ে উঠছে। বছরের পর বছর কৃষি কাজ করে পরিবার চালালেও এখন সেই জমি থেকে কোনো ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না; বরং প্রতি মৌসুমে লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে।
কৃষক ওসমান গনি বলেন, আগে তিন ফসল উঠত, এখন একটাও ঠিকমতো হয় না। সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। প্রশাসন যদি দ্রত ব্যবস্থা না নেয়, আমরা বাধ্য হয়ে পথে নামতে বাধ্য হবো।
আরেক ভুক্তভোগী কৃষক আল মামুন বলেন, প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক কালভার্টের মুখে বাঁধ দিয়েছে। অভিযোগ করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা চাই বাঁধ ভেঙে দ্রত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হোক।
পুকুর খননকারী আক্তার মেম্বার বলেন, কালভার্টের মুখে পুকুর করেছে কোরবান আলী, সেজন্য পানি বের হচ্ছে না। ওখানে খুলে দিলে আমরাও খুলে দেব।
কালভার্টের মুখে পুকুর খননকারী কোরবান আলীও একই কথা বলছেন। তিনি বলেন, আমার পুকুরের পশ্চিমে আরও পুকুর আছে। ওরা কাটলে আমিও কেটে দেব।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে দ্রুতই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।
সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কৃষকদের দাবি, অবিলম্বে বাঁধ ভেঙে খাল পরিষ্কার করে পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি এমন সমস্যা যাতে পুনরায় না ঘটে, তার জন্য কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
মন্তব্য করুন