ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গাজীপুরের টঙ্গীতে মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এর সুযোগে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে, বিশেষ করে বস্তি ও আবাসিক এলাকার অলিগলিতে, প্রকাশ্যে এবং নির্ভয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টঙ্গীর বস্তিগুলো এখন মাদক ব্যবসার পাইকারি হাট।
প্রকাশ্যে মাদকের হাট
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী অঞ্চলের পূর্ব ও পশ্চিম থানার আওতাধীন এলাকাগুলোতে সরেজমিনে দেখা গেছে- গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, দেশি-বিদেশি মদ, প্যাথেডিন, চরশ, আফিম- হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও মোটরসাইকেল/রিকশার মাধ্যমে হোম ডেলিভারিতে মাদক পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সেবনকারীদের কাছে। রেললাইন, পরিত্যক্ত ভবন, মাঠ- সব জায়গায়ই মাদকসেবীদের জমায়েত দেখা যায় দিনের আলোতেও।
সিন্ডিকেটের শক্ত ঘাঁটি
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ঢিলেমি এসেছে। ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা আগের তুলনায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
৪৬নং ওয়ার্ডের কেরানীরটেক বস্তি দীর্ঘদিন ধরেই ‘মাদক পল্লী’ নামে কুখ্যাত। এখানে কাদিরের মেয়ে রুনা ও স্বামী সুমন, ছেলে রিফাত, কারিমা, কুলছুম-সিরাজ, নারগিস-কামাল, রহিমা, বড় রানী, ছোট রানী, আকলী-আনু, বাবলু-স্বর্ণালী, নাজমা, খালেদা, আখি-সুমন, আমির আলী, সেহেরজান, মনির-মর্জিনা, রহিম প্রমুখ সরাসরি মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত। তাদের অর্থ জোগায় সুদি জাকির।
এই বস্তির পাশেই রয়েছে চার তারকা মানের হোটেল জাভান- যেখানে প্রকাশ্যে বিদেশি মদ বিক্রি হয় কিশোর-যুবকদের কাছে এবং রাতভর অসামাজিক কার্যক্রম চলে।
৫৬নং ওয়ার্ডে অবস্থিত সমবায় ব্যাংক মাঠ বস্তিতে ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ মোমেলা ও তার স্বামী জাহাঙ্গীরের সিন্ডিকেট পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। ইয়াবা বিক্রি করছে কল্পনা, রানী, বাচ্চু, বাদলের মা; প্যাথেডিন বিক্রি করছে মিনারা। এখানকার আরেক প্রভাবশালী আরফিনা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসা চালায়। তার স্বামী জামাল চোর সিন্ডিকেটের হোতা।
এরশাদ নগর ও অন্যান্য এলাকা
৪৯নং ওয়ার্ডের বাস্তুহারা এলাকায় ৩ নম্বর ব্লকে ইয়াবা বিক্রি করছে খালেদা, শারমিন, লিপি, আরিফ; ৪ নম্বর ব্লকে পারুলী। ৫৫নং ওয়ার্ডে নজরুলের বস্তির সামনে ওয়াসিম ও বৃষ্টি; লাল মসজিদ বস্তিতে সুন্দর আলী। ৫৭নং ওয়ার্ডের হাজী মাজার বস্তিতে বর্তমানে ডুবলির নেতৃত্বে চলছে হেরোইন, ইয়াবা ও গাঁজা ব্যবসা। এখান থেকে সারা দেশে পাইকারি মাদক সরবরাহ হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের অভিযান অনেক সময় ‘লোক দেখানো’ হয়। সেনাবাহিনী কয়েকবার অভিযান চালালেও পরদিনই আবার ব্যবসা জমে ওঠে। জনগণের দাবি- মাদকের বস্তিগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক, কারণ এই ব্যবসা ধ্বংস করে দিচ্ছে পুরো এক প্রজন্মকে।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম, দক্ষিণ) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে কোনো আপোষ নেই। প্রতিদিন আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে কঠোর নজরদারি চলছে। মাদক ব্যবসায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
মন্তব্য করুন