নওগাঁর রাণীনগরে ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে দশম শ্রেণির এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি উপজেলার বিশিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
এদিকে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির মূল্য হিসেবে ৫০ হাজার টাকায় রফাদফা করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে রফাদফার এই কাজটি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে মীমাংসা করার বিষয়টি স্বীকার করলেও টাকার বিনিময়ে মীমাংসা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। আর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনা শুনেছি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাজারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়নের মাধ্যমে জানা যায় যে, গত রোববার (১৭ আগস্ট) বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির এক ছাত্র জোরপূর্বক একই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ২য় তলা থেকে হাত ধরে ৩য় তলার এক বাথরুমে নিয়ে যায়। সেখানে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিলে ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর ১০ম শ্রেণির অন্য ছাত্ররা বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্রীকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে ছাত্রীর বাবা উপযুক্ত বিচারের আশায় অভিযোগ দিলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিদ্যালয়ে একটি গ্রাম্য সালিশ অনুষ্ঠিত হয়।
সালিশে ছাত্রের এক লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ছাত্রের পরিবার মেনে না নিলে প্রধান শিক্ষক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদনপত্র লেখেন। কিন্তু সেই আবেদনপত্র রহস্যজনকভাবে প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর না দিয়ে বুধবার (২০ আগস্ট) গোপনে গুটিকয়েক স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে ছাত্রের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে আপস করে দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশিয়া গ্রামের একজন বাসিন্দা ও বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত গ্রাম্য সালিশের একজন সদস্য জানান, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মেয়ের পরিবারকে ম্যানেজ করে প্রশাসনের কাছে যাওয়া থেকে বিরত রাখেন। এরপর গত বুধবার অত্যন্ত গোপনে ওই দুই ব্যক্তির যোগসাজশে গুটিকয়েক ব্যক্তিদের নিয়ে ছেলের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে বিষয়টি মিটমাট করা হয়েছে।
ছাত্রীর বাবা জানান, প্রথম দিকে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয়দের চাপাচাপিতে ছেলের পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি মিটমাট করে নিয়েছি। তিনি টাকা দিয়ে মিটমাট করার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাজারুল ইসলাম জানান, ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের চাহিদা মোতাবেক ওই দিন রাতে বিষয়টি মিটমাট করা হয়েছে। ছাত্র পক্ষের জরিমানা ছাড়াই বিষয়টি হাত ধরে মাফ চাওয়ার মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে। তবে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে জানতে চাইলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিষয়টি সম্পন্ন মিথ্যে বলে দাবি করেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। তিনি কালবেলাকে বলেন, শ্লীলতাহানির ওই ঘটনা ঘটার পর আমরা ছেলে পক্ষের এক লাখ টাকা জরিমানা করেছিলাম। কিন্তু তারা কেউ মানেনি। তখন তাদের আইনের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু পরে শুনতে পাই তারা নিজেরাই মীমাংসা করে নিয়েছে। তাই সেদিন কোনো জরিমানা ছাড়াই বিষয়টি স্থানীয়ভাবে কিছু ব্যক্তিদের নিয়ে হাত ধরে মীমাংসা করা হয়েছে।
পারইল ইউনিয়নের দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হোসেন জানান, বিষয়টি জানার পর গত ১৯ আগস্ট তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়ের বাবার সঙ্গে কথা বলেন। মেয়ের বাবা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধান না চাইলে তিনি মেয়ের বাবাকে পরের দিন থানায় আসতে বলেন। কিন্তু মেয়ের বাবা রহস্যজনকভাবে থানায় আর আসেননি। তবে তিনিও লোকমুখে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার মাধ্যমে মিটমাট করার বিষয়টি জেনেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান কালবেলাকে জানান, বিষয়টি তিনি লোকমুখে জেনেছেন। যদি কেউ অভিযোগ করেন, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন