আতিকুর রহমান, কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০১:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চালকদের বিশ্রামাগার নিজেই বিশ্রামে

কুমিল্লা জেলার নিমসারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে নির্মিত আধুনিক সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার। ছবি : কালবেলা
কুমিল্লা জেলার নিমসারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে নির্মিত আধুনিক সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার। ছবি : কালবেলা

মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য সরকারিভাবে শতকোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক পার্কিং সুবিধাসহ নির্মিত বিশ্রামাগার টিকটকার, বখাটে ও মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মী বা কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় সড়কের পাশে নির্মিত এ বিশ্রামাগার দিনের বেলা টিকটক ভিডিও তৈরি, উচ্চ স্বরে গান বাজানো ও অশালীন আচরণ যেমন দেখা যায়, তেমনি রাত নামলেই সেখানে জমে মাদকসেবীদের আড্ডা।

পণ্যবাহী যানবাহনের চালকরা একটানা দীর্ঘ সময় গাড়ি চালাতে হয়, যা সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করে। অনেক দুর্ঘটনারই কারণ টানা বিশ্রামহীন গাড়ি চালানো। এ কারণে ২০১৯ সালে চার মহাসড়কে চারটি বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

সে ধারাবাহিকতায় কুমিল্লা জেলার নিমসারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ১৩ একর জায়গা নিয়ে ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৪ সালের জুন মাসে নির্মিত হয় আধুনিক সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার। কিন্তু বছর গড়িয়ে গেলেও এখনো ইজারা দেওয়া কিংবা সরকারি তত্ত্বাবধানে চালুর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার নিমসারে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ প্রকল্পের সাবস্টেশনসহ ভবন ও পার্কিংয়ের রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। রাস্তায় লাগানো হয়েছে আলোকসজ্জার লাইট। ১০০ চালকের জন্য আধুনিক সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগারে বিনোদন পয়েন্ট, ক্যান্টিন, গোসলখানা, নামাজের জায়গা, ঘুমানো ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা কক্ষ রয়েছে। এ ছাড়া ১০০টি পণ্যবাহী গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান, ড্রেনসহ রয়েছে যানবাহনের ত্রুটি মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপ। পণ্যবাহী চালকরা অল্প খরচে এসব আধুনিক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

নকশা অনুযায়ী বিশ্রামাগার দোতলা করার কথা থাকলেও ট্রাক মালিক ও চালকসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মিটিংয়ের পর এটিআরও দোতলা বাড়িয়ে চারতলা করা হয়। এতে নির্মাণ ব্যয়ও এক চতুর্থাংশ বৃদ্ধি পায়। বিশ্রামাগার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের জুনে। তিন বছর মেয়াদে ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এ সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও এক বছর ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে আরও দোতলা করতে হবে বলে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয় ২০২৪ সালের জুন মাসে।

এদিকে আধুনিক এই বিশ্রামাগার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৬ কোটি টাকা। তবে নানা কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বারবার বৃদ্ধি করার ফলে ব্যয় বেড়ে হয় ৯৬ কোটি টাকা। চতুর্থ দফায় বিশ্রামাগার প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে এতে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বেড়েছে।

প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপসহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, বেশ কিছু কারণে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বেড়েছে। বিশ্রামাগার নির্মাণকাজের কিছু জায়গায় মাটির সমস্যার কারণে পাইলিং অনেক বেশি গভীরে করতে হয়েছে, যা পরিকল্পনায় ছিল না। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং সর্বশেষে ডিজাইনের পরিবর্তন কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের কুমিল্লা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক রোটারিয়ান কাজী জাকির হোসেন বলেন, বিশ্রামাগারটি চালু হলে মহাসড়কে পণ্যবাহী চালকদের ভ্রমণজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হবে। সেই সঙ্গে চালকরা স্বস্তিদায়কভাবে গাড়ি চালাতে পারবেন। ফলে সড়ক দুর্ঘটনাও হ্রাস পাবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও কুমিল্লা জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহমেদ কালবেলাকে বলেন, সারা দেশ থেকে আসা প্রায় ১০ হাজার পণ্যবাহী যানবাহন প্রতিদিন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করে। এসব গাড়িতে একজন ড্রাইভার এবং তার সহকারী থাকে। এসব পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য পার্কিং সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শতকোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় এক বছর আগে; কিন্তু এখনো চালু হয়নি। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। বিশ্রামাগারটি ইজারা বা অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ওঅ্যান্ডএম) ব্যবস্থায় কিংবা বিভাগীয় পদ্ধতিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করা প্রয়োজন।

কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, প্রায় ১৩ একর জায়গায় নির্মিত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। বারবার নকশা পরিবর্তনের কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়েছে। এখন প্রকল্পটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে।

তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহে আমরা এটির উদ্বোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে মিটিং করেছি। আশা করি দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উদ্বোধনের পর প্রতিষ্ঠানটি পাবলিক ইজারার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। আমাদের লোকবল কম থাকার কারণে মাত্র দুজন দারোয়ান দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প চালু হলে কোনো মাদকাসক্ত বা টিকটকাররা সচরাচর ঢুকতে পারবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ট্রেন বিলম্বে যাত্রীদের বিক্ষোভ

খালেদা জিয়া নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য : বুলু

সিংহ শিকারের জন্য বেরিয়ে আসে, মোদিকে ওপেন চ্যালেঞ্জ বিজয়ের

‘বাইরে থেকে লোক এসে দেশে সড়ক বানিয়ে দেয়, এটা লজ্জার’

বাংলাদেশ পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা ভারত থেকে আটক

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর সরকারি ছুটি কবে?

শ্রাবন্তীর লেহেঙ্গায় মুগ্ধ ভক্তরা

শুক্র-শনি ছুটিসহ এনজিওতে চাকরির সুযোগ

এইচএসসি পাসেই চাকরি দিচ্ছে আকিজ গ্রুপ, পাবেন আবাসন সুবিধাও

একাদশে ভর্তির তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন কবে?

১০

মাঠের করুণ অবস্থা দেখে কান্না চলে আসছে : বুলবুল

১১

আরও ১৪ জেলেকে অপহরণ করল আরাকান আর্মি

১২

ব্রাজিলে বেড়ে ওঠেও আর্জেন্টিনার জার্সিতে স্বপ্ন দেখছেন তরুণ ফুটবলার

১৩

ইয়েমেনের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় ইসরায়েল

১৪

সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে যেসব অঞ্চলে

১৫

ইচ্ছাকৃতভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পিছিয়ে রাখা হয়েছিল : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৬

বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানকে শোকজ

১৭

জোয়ারের তোড়ে লোকালয়ে ভেসে এলো বনের হরিণ

১৮

৩শ সাপ পুষছেন ইদ্রিস, কামড় খেয়েছেন দুই শতাধিক

১৯

রেকর্ড জয়ের পরও সিরিজ হাতছাড়া অজিদের

২০
X