তথ্য গোপন করে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার দখল ও সরকারি অর্থ উত্তোলন করেছেন মনিরামপুরের হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সনজিৎ কুমার বিশ্বাস। বিষয়টি জানাজানি হলে বিদ্যালয় এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা ঝড় ওঠে।
সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সব দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিযোগকারী জানান, হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সনজিৎ কুমার বিশ্বাস ২০২৩ সালে ২৪ ডিসেম্বর এক ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নির্বাচিত হন। তৎকালীন মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার তার নিয়োগের সব ব্যবস্থা করেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সনজিৎ কুমারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতায় একাধিক তৃতীয় বিভাগধারীর প্রধান শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করার সুযোগ নেই। সেখানে একাধিক তৃতীয় বিভাগধারী সনজিৎ কুমার বিশ্বাসকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মনোনীত করা হয়।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, সনজিৎ কুমার বিশ্বাস ১৯৯২ সালে এইচএসসি এবং ১৯৯৫ সালে বিএ তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী ক্রমিক নং-৯ এ বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে একের অধিক তৃতীয় বিভাগ/সমমান গ্রহণযোগ্য হবে না।
প্রশ্ন উঠেছে, সনজিৎ কুমার বিশ্বাসের দুটিতে তৃতীয় বিভাগে পাস থাকলেও কীভাবে তাকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রধান শিক্ষক হিসেবে মনোনীত করেন।
অভিযোগ উঠেছে, তার এই কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় এমপিওভুক্তি করতে বিপত্তি ঘটে। সে সময়ের শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার তাকে এমপিওভুক্ত করান না। সূত্র জানায়, ২০২৪ সালে মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন আকরাম হোসেন। যোগাদানের পর আকরাম হোসেন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণির পাস সনদে দ্বিতীয় শ্রেণি দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক সনজিৎ কুমার বিশ্বাসকে ২০২৪ সালে এমপিভুক্তি করান। এ ঘটনা জানাজানির পর এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা আকরাম হোসেন মোবাইল ফোনে কালবেলাকে বলেন, বদলির কারণে বর্তমানে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার দায়িত্বে রয়েছি। মনিরামপুর একটি বড় উপজেলা। যে কারণে কোন প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষক এমপিওভুক্তি করা হয়েছিল সেটি মনে নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। যিনি নিয়োগকালীন দায়িত্বে ছিলেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক সনজিৎ কুমার বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি রিসিভ হয়নি।
এদিকে এলাকাবাসীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএসএম জিল্লুর রশীদ সরেজমিন হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে যান।
শিক্ষা কর্মকর্তা এএসএম জিল্লুর রশীদ বলেন, প্রধান শিক্ষক সনজিৎ কুমারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক। নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
মন্তব্য করুন