কয়েকদিন পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় এখন রোপা আমন ধান রোপণের ধুম পড়েছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায়। রোপা আমন ধান রোপণে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। চলছে জমি তৈরি, চারা তোলা আর ধান রোপণের কাজ। চাষিদের কোলাহলে মুখরিত মাঠের পর মাঠ। বীজতলা থেকে চারা তোলা ও মাঠ পরিষ্কারের কাজে পুরুষদের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন নারীরাও ।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং ঠিকমতো কৃষকরা রোপা আমন ধানের আবাদ করতে পারলে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে। উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে পাঁচ হাজার ৪২৯ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বর্তমান সময়ের মতো অব্যাহত থাকলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে রোপা আমন ধান লাগানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে আগাছা পরিষ্কার, জমি প্রস্তুত, বীজতলা থেকে ধানের চারা তোলা ও জমিতে চারা রোপণে ব্যস্ত শত শত কৃষক। কেউ কেউ জৈবসার জমিতে দিতে ব্যস্ত আবার অনেকে জমি তৈরি করছেন। এখন চাষিরা জমি প্রস্তুত, চাষাবাদ এবং ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটছে। এভাবেই ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসলে মাঠে নিরলসভাবে কাজ করছেন তারা।
কৃষকরা জানান, শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত কৃষকরা আমন চারা রোপণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর শ্রাবণের শুরুতে বৃষ্টিপাত আশানুরূপ না হওয়ায় মাঠ অনেকটা শুকনো ছিল। তাই পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ভাদ্র মাসে কিছু বৃষ্টিপাত হওয়ায় মধ্যে ব্যস্ততা বেড়ে যায়।
রোপা আমন ধানের ফলন বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, আমন মৌসুমে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া, খোলপোড়া, ব্লাস্ট, বাদামি দাগ, খোল পচা, টুংরো, বাকানি এবং লক্ষ্মীরগুসহ বিভিন্ন রোগ সচরাচর দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ রোগগুলো হল খোলপোড়া, ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া, ব্লাস্ট, টুংরো, বাকানি এবং লক্ষীরগু রোগ। খোলপোড়া রোগ দমনের জন্য পটাশ সার সমান দুই কিস্তিতে ভাগ করে দিতে হবে। এক ভাগ জমি তৈরির শেষ চাষে এবং অন্য ভাগ শেষ কিস্তি ইউরিয়া সারের সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে ভেজা ও শুকনা পদ্ধতিতে সেচ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ধানক্ষেত ৩৫-৪০ দিন পর্যন্ত আগাছামুক্ত রাখতে পারলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ দমন করলে রোপা আমন মৌসুমে শতকরা ১৮ ভাগ ফলন বেশি হতে পারে।
উপজলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া এলাকার আমন চাষি বাহারুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছর ৬০ শতকে জমিতে রোপা আমন চাষাবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরই মধ্যে ২০ শতক জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি ততটা না থাকায় একটু বিপাকে পড়তে হয়েছিল। এখন পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ বছর ধানের চারার কিছুটা সংকট রয়েছে। আশা করছি, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে শীঘ্রই বাকি জমিতে চারা কিনে এনে রোপণ করব।
উপজেলার নাগাইশ গ্রামের আমন চাষি রবিউল, মন্তাজ মিয়া ও শামসু মিয়া জানান, বর্তমানে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাতেই মাঠে আমন ধানের চেহারায় পরিবর্তন আসবে। বৃষ্টি কম হলেও প্রায় প্রতিদিন কিছু বৃষ্টি হওয়াতে আমন ধানের অবস্থা ভালো। যারা এখনও ধানের চারা রোপণ করেনি তাদের জন্যেও চারা রোপণের আবহাওয়া এখন অনুকূলে রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহবুবুল হাসান কালবেলাকে বলেন, এ উপজেলার কৃষকদের রোপা আমন ধান চাষে আগ্রহ রয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা বর্তমানে পুরোদমে আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া বর্তমানে অনুকূলে রয়েছে। এ অবস্থা থাকলে আমরা আশা করছি ঠিকঠাক মতো রোপা আমন আবাদ শেষ হবে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ হবে। প্রান্তিক কৃষকদের পাশে বিভিন্ন পরামর্শসহ যেকোনো সেবায় নিয়োজিত আছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
মন্তব্য করুন