যারা চোর, বাটপার, চাঁদাবাজ ও হুমকিদাতা তাদের মা-বাবার নাম ও ঠিকানাসহ বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা-উপজেলা ইউনিয়ন ওয়ার্ডে তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে বিচার সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দাবিতে রাজনৈতিক কর্মশালা ও সমন্বয় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দলে দেখি বড় বড় নেতা ভালো ভালো কথা বলেন। কিন্তু তারা এখন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ব্যস্ত, কেউ রাতের আঁধারে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনে ব্যস্ত, কেউ চাঁদা নিতে ব্যস্ত, কেউ মিথ্যে মামলা দিয়ে মামলা বাণিজ্য করতে ব্যস্ত। আগামীর বাংলাদেশে আর কাউকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা হয়ে উঠতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, পঞ্চগড় জেলা ছাত্রদল স্কুলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি দেওয়া শুরু করেছে। যেই সাহস শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ করতে পারেনি সেই সাহস চব্বিশ পরবর্তী বাংলাদেশে ছাত্রদল করছে। এই বাংলাদেশের কোনো স্কুল কলেজে ছাত্র রাজনীতির নামে লেজুরবৃত্তি রাজনীতি চলবে না। স্কুলকলেজগুলোতে আহ্বায়ক কমিটির নামে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপির অযোগ্য লোকজন সভাপতি হয়ে পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রথমসারির বিএনপির নেতারা কোথায় কোথায় চাঁদা নেন সব খবর আমাদের কাছে আছে। এ সময় সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দলেন নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে পঞ্চগড়ের জেলা ও পৌরসভাগুলোতে এনসিপির কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে প্রধান বক্তা হিসেবে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, আমাদের সামনে এখন ‘ডু অর ডাই’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি এখন এমন, হয় আমরা থাকবো আর না হয় গণহত্যাকারী ও তাদের লোকজন থাকবে। এই আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার জন্য কত কিছু করা হচ্ছে। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার যারা বাংলাদেশ বিরোধী রাজনৈতিক দল যেমন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি তারা বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই আমরা বলে গেছি বাহাত্তরের সংবিধান আর চলবে না। এই সংবিধান এখন মরহুম সংবিধান। আমাদেরকে এখন নতুন সংবিধান বানাতে হবে। আওয়ামী লীগ এই সংবিধান জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল। ওই সংবিধানে এক ব্যক্তিকে এবং একটি দলকে সকল ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানের সবচেয়ে বড় ভিকটিম ছিল বিএনপি। কিন্তু তারা এখন এই সংবিধানের মহাপ্রেমি হয়ে গেছে।
সারোয়ার তুষার বলেন, সংস্কারের নাম নেই কিন্তু আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য এই সরকার গাড়ি কিনে ফেলেছে। এই সংস্কার না হলে বাংলাদেশে আরও একটি গণঅভ্যুত্থান হবে। যে আমলা ও পুলিশ দিয়ে অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তাদের কিন্তু বিচার হয়নি। তারা মনের দিক থেকে আওয়ামী লীগের কাছাকাছি পাচ্ছে বিএনপিকে। যারা সারা দেশে তুমুল লুটপাট করছে। তাই সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
‘বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য বাংলাদেশে নির্বাচন হবে না। এখন নির্বাচনের নামে যে আয়োজন হচ্ছে তা একটা দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য। আমরা ইউনূস সাহেবকে বলতে চাই এটাই যদি আপনার মনে থাকে তাহলে ভোট দিয়ে টাকা অপচয় না করে এমনিই ঘোষণা দিয়ে দেন। ইউনূসসহ এই সরকারের অবস্থা এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। কোন রকমে একটা কিছু দিয়ে চলে যেতে চাচ্ছে। ভিপি নুরের উপর যেভাবে হামলা হয়েছে কোন স্বাধীন দেশে এভাবে কাউকে মারা হয় না। আমরা যদি এর প্রতিবাদ না করি তাহলে আমাদের উপরেও এই হামলা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে। তাহলে এটি হবে ইতিহাস।’ পাশাপাশি ভোট বানচালের রাজনীতি সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, জাপা ও আওয়ামী লীগ বাংলাদেশবিরোধী শক্তি, এরা ভারতের এজেন্ট। যারা এদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করতে চেষ্টা করছে তাদের চেষ্টা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের মানুষ কখনো এদের আসতে দিবে না। আসতে হলে আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে পঞ্চগড়ের এনসিপি ও জাতীয় যুবশক্তির নেতারা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন