ঘড়ির কাঁটা সকাল দশটা। নগরীর ষোলশহর আলমগীর খানকা থেকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে জশনে জুলুসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুক্রবার (০৫ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে জামেয়া আহমদীয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ কানায় কানায় ভর্তি।
শনিবার (০৬ সেপ্টেম্বর) সকালে জশনে জুলুসে নেতৃত্বদানকারী পাকিস্তান থেকে আসা দরবারে সিরিকোটের হজরতে কেরামের মধ্যে অন্যতম সাজ্জাদানশীন পীর আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ মুদ্দাজিল্লুহুল আলীকে বহন করা গাড়ি ষোলশহর থেকে নগরীর কয়েকটি এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
এ সময় হুজুর কেবলাকে এক নজর দেখতে সড়কের দুপাশ এবং ভবনের ছাদে, বারান্দায় অপেক্ষমাণ আশেকে রাসুল (স.) প্রেমিকদের হাত নেড়ে অভিভাবাদন জানান পীর আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী।
এ সময় তার গাড়ির বহরে দরবারের সাহেবজাদা হজরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ (মু.জি.আ.) এবং সাহেবজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ মেহমুদ আহমদ শাহ্ (মু.জি.আ.) সঙ্গে ছিলেন।
এদিন আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১২টার সময় নগরীর মুরাদপুরে সড়ক সংলগ্ন বড় নালার ওপর দেওয়া লোহার ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে হুজুর কেবলাকে একনজর দেখতে অপেক্ষায় ছিলেন ভক্ত, আশেকরা। তখন হঠাৎ ব্রিজটির একটি অংশ ভেঙে যায়। এতে হুড়োহুড়িতে অনেকে নিচে নালায় পড়ে আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুলুসে অংশ নিতে ভিড়ের চাপ সামলাতে না পেরে সাঁকোর একটি অংশ ভেঙে যায়। এতে হুড়োহুড়িতে অনেকে নিচে নালায় পড়ে আহত হন। স্থানীয়রা ও স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
এদিকে একইদিন ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসে প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে একজন এবং পদদলিত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ছয়জন। আঞ্জুমানে রহমানিয়া ট্রাস্টের মেডিকেল টিমের সদস্যরা হতাহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যান।
তাদের এক সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, মানুষের ভিড়ের মধ্যে গরমে অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েকজন নিচে পড়ে যান। এ সময় পদদলিত হয়েছেন হতাহতরা। আহত অবস্থায় আটজনকে উদ্ধার করে আমরা হাসপাতালে নিয়ে আসি। এর মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
তারা হলেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা আইয়ুব আলী (৬০) ও নগরের কালামিয়া বাজার এলাকার সাইফুল ইসলাম (১৩)। অপরদিকে আহতদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন সেকান্দর, সাদ, আবীর, কামাল ও বেলায়েত।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী ইনচার্জ সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, জশনে জুলুসে প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে একজন এবং পদদলিতে আরেকজনের মৃত্যু হয়। আহতরা চিকিৎসাধীন। একজনকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি তদন্ত মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, মুরাদপুরে জশনে জুলুসে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মানুষের চাপাচাপিতে কয়েকজন নিচে পড়ে যান। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে আরও একজনের মৃত্যু হয়। অপরদিকে মুরাদপুর মোড়ে নালার ওপর লোহার ব্রিজ ভেঙে অনেকে বড় নালায় পড়ে যান। সেখানে কয়েকজন হতাহত থাকতে পারে।
মন্তব্য করুন