রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঋণের দায়ে আত্মহত্যা, আবার সেই ঋণেই চল্লিশা

মিনারুল ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জন্য আয়োজন করা চল্লিশা। ছবি : কালবেলা
মিনারুল ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জন্য আয়োজন করা চল্লিশা। ছবি : কালবেলা

রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামের কৃষক মিনারুল ইসলাম (৩৫) অনেক দিন ধরেই ঋণের বোঝা টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া এই মানুষটির জীবনে নেমে আসে অমানিশা।

শেষমেশ দারিদ্র্য ও হতাশার অন্ধকারে তিনি এমন এক সিদ্ধান্ত নেন, যা কাঁপিয়ে দেয় পুরো দেশকে। গত ১৪ আগস্ট রাতে স্ত্রী মনিরা খাতুন (৩০), ছেলে মাহিম (১৪) ও কন্যাশিশু মিথিলাকে (৩) নৃশংসভাবে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেন মিনারুল।

মৃত্যুর আগে তিনি একটি চিরকুট লিখে গিয়েছিলেন— ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।’ এই কয়েকটি লাইন যেন তার অসহায় জীবনের এক নির্মম দলিল।

যে ঋণের দায়ে মিনারুলের এ আত্মহত্যা, এবার ফের ঋণ করেই মিনারুল ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জন্য আয়োজন করা হলো চল্লিশা।

ধারদেনা করে চল্লিশা : চল্লিশ দিন পর শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার বামনশিকড় গ্রামের নিজ বাড়িতে এ চল্লিশার আয়োজন করে মিনারুলের পরিবার। এ আয়োজনে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। অথচ এই টাকার কোনো অংশই ছিল না পরিবারের হাতে— সবই ধারদেনা করে করা হয়েছে।

বাড়ির সামনে ও পেছনে বড় দুটি প্যান্ডেল তোলা হয়েছিল। সেখানে একে একে বসেন গ্রামের মানুষজন, আত্মীয়স্বজন ও আশপাশের অতিথিরা। খাবারের তালিকায় ছিল ভাত, ডাল আর মাছের মুড়িঘণ্ট। প্রায় এক হাজার দুশ মানুষ অংশ নেন সেই আয়োজনে।

চোখে অশ্রু নিয়ে মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী বললেন, ‘আমাদের এলাকায় একে চল্লিশা বলে, আবার অনেকে ফয়তা বলে। বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা এটা করে আসছি। আমি গরিব মানুষ, মাংস দিতে পারিনি। সামর্থ্য মতো যা পেরেছি করেছি। সমাজের মানুষ সবাই খেয়ে দোয়া করুক— এই চেয়েছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘চারজন মানুষ একসঙ্গে মারা যাওয়ার পর বাড়িটা খুব ভারী লাগছিল। ছোট ছেলেপিলেরা ভয় পাচ্ছিল। তাই এই আয়োজন করলাম যাতে সবার ভয় কাটে, বাড়িটা আবার স্বাভাবিক হয়। এজন্যই দোয়া হলো, তারপর খাওয়াদাওয়া।’

কিন্তু এক লাখ টাকা জোগাড় হলো কীভাবে? প্রশ্ন শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। ‘সবই ধারদেনা। আমার তো কোনো জমানো টাকা নেই। এখন ১৫-১৬ কাঠা জমি আছে, তার মধ্য থেকে এক কাঠা বিক্রি করব। সেই টাকা দিয়ে ধার শোধ করতে হবে। আর কোনো উপায় নেই।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মুর্শেদ কালবেলাকে বলেন, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের চল্লিশার কোনো বিধান নেই। তবে সমাজে এটা রেওয়াজ হয়ে গেছে। কেউ মারা গেলে পরিবারকে সমাজের চাপে এই আয়োজন করতেই হয়।’

যে মানুষ ঋণের বোঝা বইতে না পেরে প্রাণ দিয়েছে, তার পরিবারের জন্য চল্লিশা করতে আবারও ধারদেনার বোঝা চাপল। একদিকে শোক, অন্যদিকে নতুন ঋণের ভার— এই দ্বৈত বাস্তবতা যেন গ্রামীণ জীবনের অমানবিকতার এক নির্মম প্রতিচ্ছবি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশের বাজারে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

বিয়ের আগেই ‘ব্যাচেলরেট’ ট্রিপ? শ্রীলঙ্কায় রাশমিকা

বিপিএল: টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই মিলল বড় দুঃসংবাদ

এক বছরে ৫ লাখ সেনা হারিয়েছে ইউক্রেন, দাবি রাশিয়ার

বৃহস্পতিবার ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

যমুনা গ্রুপে চাকরি

বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

১২ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

মার্কিন সিনেটে ৯০১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিল পাস

আ.লীগ নেতা রেজাউল গ্রেপ্তার

১০

আজ যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

১১

‘প্রতিটি আন্দোলনের পেছনে মূল ভূমিকায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবার’

১২

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১৩

আরও ভয়াবহ সংকটে গাজা

১৪

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

১৫

১৮ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

বিএনপিতে যোগ দিলেন কৃষক লীগের সাবেক ২ নেতা

১৭

‘মোটরসাইকেলটিকে ১শ মিটার টেনে নিয়ে যায় ঘাতক বাস’

১৮

তামাক চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

১৯

মধ্যরাতে ঝরল ২ প্রাণ

২০
X