রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাবির দ্বাদশ সমাবর্তনে ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবের আমেজ

সমাবর্তনকে ঘিরে সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ছবি : কালবেলা
সমাবর্তনকে ঘিরে সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ছবি : কালবেলা

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দ্বাদশ সমাবর্তন। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় স্টেডিয়ামে এ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবর্তনকে ঘিরে সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। দীর্ঘদিন পর চিরচেনা ক্যাম্পাসে ফিরে এসে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠেন গ্রাজুয়েটরা। অনেককে দেখা যায় বাবা-মাকে গাউন পরিয়ে দিতে। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, প্যারিস রোড, বুদ্ধিজীবী চত্বর, পরিবহন চত্বর ও স্টেডিয়ামের আশপাশে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রাজুয়েটরা।

সকাল ৯টায় গ্রাজুয়েটরা সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করেন। পরে সাড়ে ৯টায় সমাবর্তন শোভাযাত্রা শেষে আমন্ত্রিত অতিথিরা তাদের আসন গ্রহণ করেন। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে অনুষদ অধিকর্তারা সভাপতির নিকট ডিগ্রি উপস্থাপন করেন। এরপর সমাবর্তন বক্তারা তাদের বক্তব্য প্রদান করেন। দুপুর ১২টায় সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এরপর দুপুর আড়াইটা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন সমাবর্তনে আসা স্নাতক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

এবারের দ্বাদশ সমাবর্তনে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জনকারী ১২টি অনুষদের মোট ৫ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ৭৯ জনকে পিএইচডি, ১১ জনকে এমফিল এবং ৭৪০ জনকে এমবিবিএস ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

সমাবর্তনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, দেশ বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে নতুন ও অর্থবহ অগ্রগতির সুযোগ তৈরি করেছে। এই সময়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার ও ন্যায্যতার পক্ষে উচ্চমানের মানবসম্পদ অত্যন্ত প্রয়োজন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সেই লক্ষ্যেই শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলছে।

তিনি আরও বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে প্রযুক্তিগত বিপ্লব, জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডিগ্রির পাশাপাশি প্রয়োজন নীতিবান নেতৃত্ব, উদ্ভাবনী চিন্তা ও দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব। এ জন্য তিনি স্নাতকদের সাহসী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও কর্মে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবর্তন বক্তা ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই গ্র্যাজুয়েটদের অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখা হয়। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এই তরুণ সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। তবে এই পরিবর্তন এখানেই শেষ নয়; প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ওয়ার্ল্ড ক্লাস সিটিজেন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে শিক্ষার্থীদের এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।

সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল ইসলাম আবরার বলেন, শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে চিন্তা করলে শুরুতেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে অধ্যাপক ড. সামসুজ্জোহা স্যারের আত্মবলিদানের কথা। তাঁর ত্যাগ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শিক্ষার প্রকৃত নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতার নাম। জ্ঞান দায়িত্বের সৃষ্টি করে; আর যখন সমাজ অন্যায়ের মুখোমুখি হয়, তখন শিক্ষিত মানুষের নীরবতা আপসেরই শামিল।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো দল করি না, আমি নিরপেক্ষ’, শিক্ষিত মানুষের এমন অবস্থান গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অন্যায় যখন সংঘটিত হয়, তখন অবশ্যই একটি অবস্থান নিতে হয়। অধ্যাপক ড. সামসুজ্জোহা তার জীবন দিয়ে আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন। তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি নাগরিক মর্যাদাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের প্রগতির পথে পরিচিত করেছে। সংস্কৃতি, রাজনীতি, বৈষম্যবিরোধী চেতনা ও দক্ষতার বিকাশ, সবকিছুর সূচনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই হয়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, আমরা কতটুকু সেই দায়িত্ব পালন করতে পারছি? বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরি করা।

ড. চৌধুরী রফিকুল ইসলাম আবরার বলেন, বিগত ১৭ বছরের মতো পরিস্থিতি যেন ভবিষ্যতে আর তৈরি না হয়, সে জন্য শিক্ষার্থীদের সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হিসেবে দেশ ও সমাজের জন্য সক্রিয় ও ইতিবাচক অবদান রাখার আহ্বান জানান তিনি।

সমাবর্তনে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, উপউপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মতিয়ার রহমান, রাবির সাবেক উপউপাচার্য ও প্রফেসর ড. মামনুনুল কেরামতসহ প্রায় ৪ হাজার স্নাতক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সমাবর্তনের অতিথি পরিবর্তন, নিবন্ধনের সময় বাড়ানোসহ কয়েকটি দাবি জানিয়েছিলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একাংশ। দাবি মানা না হলে তারা সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দেন। তবে এসবের মধ্যেই নির্ধারিত সময়েই সমাবর্তন আয়োজিত হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউক্রেন নিয়ে জার্মানির নতুন পরিকল্পনা

অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারীর পরিচয় নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

দেশের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মহাসড়কে ভারতীয় ২ তরুণের কাণ্ড

নাশকতার দুই মামলায় মির্জা আব্বাস-আমানসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি 

‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা

বিএনপিতে যোগ দিলেন সাবেক জামায়াত নেতা

আপনারা মৃত্যু ঘোষণা করলেই মরে যাওয়ার চেষ্টা করব : নচিকেতা

বাংলাদেশকে উচিত শিক্ষা দেবে ভারত : আসামের মুখ্যমন্ত্রী

এলাকার সবার কাছে প্রিয় শরিফ ওসমান হাদি

১০

খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের নিরাপত্তা টিমের প্রধান শামসুল ইসলাম

১১

সাত শতাধিক ইন্টার্ন ডাক্তার পেলেন পেশাগত নির্দেশনা

১২

মেজর সাদিকের স্ত্রী আরেক সন্ত্রাস বিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার

১৩

টাঙ্গাইলে ২৪ ঘণ্টায় আ.লীগের ১৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

১৪

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলবের ব্যাখ্যা দিল ভারত

১৫

‘সবাই রোনালদোর ব্যাপারে মতামত দেয়, কিন্তু খেলা দেখে না’

১৬

ত্বকে বিষফোড়া কাদের বেশি হয়? জেনে নিন সমাধান

১৭

মাজারে খিচুড়ি বিতরণ নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১

১৮

অস্কারের দৌড়ে আরও একধাপ এগিয়ে ‘হোমবাউন্ড’

১৯

টক শো-সংলাপে ব্যক্তিগত আক্রমণ না করতে ইসির নির্দেশ  

২০
X